এখন পর্যন্ত জেলার তিনটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এর মধ্যে দুটি ইটভাটা বন্ধ ও অপরটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আইন লঙ্ঘন করে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ ইটভাটায় অবাধে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কৃষিজমি ও লোকালয়ে এসব ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। উচ্চ আদালত নভেম্বর মাসে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও ব্যবস্থা না নেওয়ায় মালিকেরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রহীন এসব ইটভাটায় বিপুল উৎসাহে ইট তৈরি করছেন।
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম কার্যালয় সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ১১৩টি, যার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে ২১টির। বাকি ৯২টি ইটভাটার কোনো অনুমোদন নেই। এর মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলায় ২৪টি, উলিপুর উপজেলায় ২০, সদর উপজেলায় ১৬, রৌমারী উপজেলায় ১০, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৫, রাজারহাট উপজেলায় ২, ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ৫, চিলমারী উপজেলায় ৪ ও রাজীবপুর উপজেলায় ৬টি ইটভাটা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ওই সব ইটভাটার কোনোটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এর মধ্যে ৪৭টি ইটভাটা কখনোই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র সংগ্রহ করেনি।
কৃষিজমি ও লোকালয়ে এসব ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
বাংলাদেশের সব জেলার অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা জারি করতে বলেছেন উচ্চ আদালত। দেশের জেলা প্রশাসকদের সাত দিনের মধ্যে ওই নির্দেশনা দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও পরিবেশসচিবকে ১৩ নভেম্বর ওই নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এই নির্দেশনার পর জেলার বৈধ ও অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর উলিপুর উপজেলার তবকপুর তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ২৪ অক্টোবর উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর ওই গ্রামে যৌথ অভিযান চালায়। এ সময় তারা একটি অবৈধ ইটভাটা আংশিক গুঁড়িয়ে দিয়ে সিলগালা করে দেয়। ইটভাটার মালিককে নভেম্বর মাসের মধ্যে ইটভাটা সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ইটভাটা সরিয়ে নেওয়া তো দূরের কথা, নভেম্বর মাসের শেষভাগ থেকে প্রশাসনের নাকের ডগায় ওই ইটভাটার মালিক জোরেশোরে ইট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে খুব একটা তৎপর হতে প্রশাসনকে দেখা যায়নি। গত নভেম্বর মাস থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র তিনটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে দুটি ভাটা বন্ধ ও একটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘৯২টি অবৈধ ইটভাটার তালিকা পেয়েছি। আমরা ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে সনদ নবায়ন, পরিবেশের ক্ষতি না করে ইট তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তাঁদের ইটভাটা পরিচালনার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছি। মালিকেরা এসব দিকনির্দেশনা না মানলে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।’
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি করা যাবে না। ওই আইনের ৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো যাবে না। এ ছাড়া এই আইনের ৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটের ভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ এই আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্বিঘ্নে ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী ও রাজারহাট উপজেলার ১০টি ইটভাটা ঘুরে তাদের কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার গর্ভের দোলায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সাতটি ইটভাটা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উলিপুর উপজেলার এক ইটভাটার মালিক জানান, যেসব ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, তারা স্থানীয় প্রশাসন, নেতা–কর্মী ও জেলা কাস্টম অধিদপ্তরকে মাসোয়ারা দিয়ে ইট প্রস্তুত করে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটাগুলো গুঁড়িয়ে দিতে এক্সকাভেটর প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের এক্সকাভেটর নেই। এ ছাড়া জনবলসংকটের কারণে সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।’