সেমি পাকা ঘরের বারান্দায় থাকা বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে পড়ে ছিলেন তাসলিমা খাতুন (৩২)। এই দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁকে বাঁচাতে তারে হাত দেন মা মরিয়ম খাতুন (৬৫)। এতে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে বাঁশ দিয়ে মিটারের তার সরিয়ে মা ও মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
আজ শনিবার সকালে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার গোবরাপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মরিয়ম খাতুন ওই গ্রামের প্রয়াত আমজাদ আলীর স্ত্রী। মেয়ে তাসলিমাকে নিয়ে তিনি বাড়িতে বসবাস করতেন। তাসলিমার ছেলে আল আমিন বর্তমানে সৌদি কারাগারে আটক আছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হতদরিদ্র মরিয়ম খাতুনের পাঁচ মেয়ে। স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের বাড়িতেই থাকতেন। তার ছোট মেয়ে তাসলিমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন একই উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামে। প্রায় ১৫ বছর আগে সাপের কামড়ে তাসলিমার স্বামীর মৃত্যু হয়। তখন তাসলিমা তাঁর একমাত্র ছেলে আল আমিনকে নিয়ে বাবার বাড়ি গোবরাপাড়ায় চলে আসেন। সেই থেকে মা–মেয়ে তাঁদের পরিবারের একমাত্র ছেলে আল আমিনকে নিয়ে বসবাস করতেন। কোনো রকমে কৃষিকাজ আর কাঁথা সেলাই থেকে আসা রোজগারে চলত তাঁদের সংসার। আল আমিন প্রায় দেড় বছর আগে কাজের সন্ধানে সৌদি আরবে যান। সেখানে নানা জটিলতায় পড়েন। পরে আটক হয়ে ১৮ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের কোনো এক সময় বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটারের তার ছিঁড়ে তাঁদের ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে ছিল। সকাল ৮টার দিকে তাসলিমা বাড়ির বাইরে কাজ সেরে ঘরে ঢুকছিলেন। এ সময় ঝুলে থাকা তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। বিষয়টি টের পেয়ে মা মরিয়ম খাতুন চিৎকার করতে করতে মেয়েকে বাচাঁতে ছুটে আসেন। তবে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে বাঁশের মাধ্যমে মিটারের তার সরিয়ে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
প্রতিবেশী মিজানুর রহমান মোল্লা জানান, মা ও মেয়ের মৃতদেহ ঘরের বারান্দায় পড়ে ছিল। বিষয়টি খুবই হৃদয়বিদারক। এমন ঘটনা আসলেই সহ্য করার মতো নয়। তাঁদের মৃত্যুতে বাড়িটি এখন শূন্য হয়ে গেল।
হরিণাকুণ্ডুর সোনাতনপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক নাজমুল হোসেন জানান, ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে মৃতদেহ পরিবারের কাছে দেওয়া হবে নাকি ময়নাতদন্ত করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের খোরশেদ আলীর পুকুরপাড়ে পোকা দমনে পেতে রাখা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে আবদুল হালিম (৫০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বাড়ি থেকে ফসলের খেতে যাওয়ার সময় বিদ্যুতায়িত হন।