সুনামগঞ্জ-২ আসন

জয়া সেনগুপ্তার সম্পদ বাড়েনি, আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বেড়েছে ৫ বছরে ৬ গুণ

জয়া সেনগুপ্তা ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা। তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর দাখিল করা হলফনামায় দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে তাঁর কোনো সম্পদ বাড়েনি।

এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল-আমিন চৌধুরী। তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ছোট ভাই। গত পাঁচ বছরে আল মাহমুদ কৃষিজীবী থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন। পাঁচ বছর আগে তাঁর কাছে ব্যবসার কোনো পুঁজি না থাকলেও এখন মোটা অঙ্কের পুঁজি রয়েছে হাতে। পাঁচ বছরে প্রায় সাড়ে ছয় গুণ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে তাঁর। পাশাপাশি পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে সাড়ে তিন গুণের বেশি।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি বিজয়ী হন। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনি ওই পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছেন। তিনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর দাখিল করা হলফনামা ও এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে পাঁচ বছরে তাঁর সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। ওই বছরের হলফনামা থেকে ১০ বছরে সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টিও লক্ষ করা গেছে।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাতবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১৭ সালে এই আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম সংসদ সদস্য হন তাঁর স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন তিনি। এবার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

এবার দাখিল করা হলফনামায় জয়া সেনগুপ্তা তাঁর পেশার ঘরে লিখেছেন, সমাজসেবা। বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭২ টাকা। পাঁচ বছর আগেও তাঁর সমপরিমাণ আয় ছিল। জয়া এবার প্রায় ৩ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। পাঁচ বছর আগেও তাঁর সমপরিমাণ টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। এবার তিনি সোয়া ৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায়ও তিনি একই টাকার স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন।

আল মাহমুদের কাছে নগদ ৪ লাখ ৭ হাজার ৫৪৬ টাকা আছে। এ ছাড়া ব্যবসার পুঁজি রয়েছে ২৫ লাখ ২০ হাজার ২০০ টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর হাতে এই ব্যবসার পুঁজি ছিল না।

পাঁচ বছরে আয় ও সম্পদ সমান থাকার বিষয়ে জয়া সেনগুপ্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর প্রয়াত স্বামী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে সম্পদ করে গিয়েছিলেন, তা-ই এখনো অটুট আছে। এর বাইরে আয়ের হিসাবে সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া তাঁর সম্মানী যুক্ত হচ্ছে। ফলে পাঁচ বছরে তাঁর আয় এবং সম্পদ সমানই রয়ে গেছে।

অপর দিকে দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ পেশা হিসেবে নিজেকে কৃষিজীবী উল্লেখ করেছিলেন। এবার কৃষিজীবীর পাশাপাশি নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৪ সালে কৃষি খাত থেকে তাঁর আয় ছিল ৯০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে তিনি এ খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে মৎস্য খাতে কোনো আয় না থাকলেও ২০১৯ সালে তিনি এ খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

আল মাহমুদ ২০১৪ সালে ব্যবসার পুঁজি থেকে আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে ২০১৯ সাল এবং এবার এ খাতে কোনো আয় দেখাননি। এবার তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পাওয়ার বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা ২০১৯ সালে ছিল ৩ লাখ টাকা।

পাঁচ বছর আগে আল মাহমুদের অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকার। এর মধ্যে নগদ ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ছিল। বাকি টাকা তিনি দেখিয়েছেন ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবের দাম। এবারের হলফনামা অনুযায়ী, আল মাহমুদের ৩০ লাখ ৪ হাজার ৯১৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। সে হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর প্রায় সাড়ে ছয় গুণ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। এবার আল মাহমুদের কাছে নগদ ৪ লাখ ৭ হাজার ৫৪৬ টাকা আছে। এ ছাড়া ব্যবসার পুঁজি রয়েছে ২৫ লাখ ২০ হাজার ২০০ টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর হাতে এই ব্যবসার পুঁজি ছিল না।

আল মাহমুদ ২০১৪ সালে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকার। তখন তাঁর নগদ ৫ হাজার এবং ব্যাংকে জমা ৬০ হাজার টাকা ছিল। এর বাইরে ৩৪ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকার আসবাব ছিল। ১০ বছরের ব্যবধানে আল মাহমুদের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ।

আল মাহমুদ ২০১৪ ও ২০১৯ সালে স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় থাকা কৃষি ও বাড়ির জমি দেখিয়েছিলেন। এবার এসব জমি দেখানোর পাশাপাশি নতুনভাবে নিজের ৩৪ দশমিক ৩৩ শতক অকৃষি জমি এবং নির্মাণাধীন একটি টিনশেড ভবন দেখিয়েছেন। এ ছাড়া এবার ব্যাংকে তাঁর আড়াই লাখ টাকা দায় আছে বলে উল্লেখ করেছেন। পাঁচ বছর আগে অবশ্য তা ছিল না।

আয়ের পাশাপাশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতা পাচ্ছি। কৃষির আয় বেড়েছে, ব্যবসার আয় বেড়েছে। এ কারণেই আয় ও সম্পদ বেড়েছে।’

এ আসনে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও জয়া সেনগুপ্তা ছাড়ও গণতন্ত্রী পার্টির মিহির রঞ্জন দাস এবং স্বতন্ত্র হিসেবে মো. মিজানুর রহমান, ঋতেশ রঞ্জন দেব ও মো. সামছুল হক চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে যাচাই-বাছাইয়ে ওই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।