ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল জলিল পাঠানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন প্রাধ্যক্ষ আবদুল জলিল পাঠান। গতকাল রাত নয়টার দিকে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের তথ্য নিতে হলের আবাসিক শিক্ষক প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, উপরেজিস্ট্রার তারিক উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কক্ষ পরিদর্শনে যান প্রাধ্যক্ষ।
ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, হলের কক্ষ পরিদর্শনের সময় প্রাধ্যক্ষসহ শিক্ষক–কর্মকর্তাদের ব্যঙ্গ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এ ছাড়া মুঠোফোনে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। পরে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় তাঁর কার্যালয়ের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে প্রাধ্যক্ষ হল থেকে চলে যান।
হল সূত্রে জানা গেছে, হলের মোট আসন ৩৯৬টি। এর মধ্যে ৮০টি আসনে আবাসিক শিক্ষার্থীরা থাকেন। বাকি সবাই অনাবাসিক শিক্ষার্থী। কোন কক্ষে কারা থাকেন, গত ১০ বছরের সেই তথ্য হল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। এ নিয়ে প্রাধ্যক্ষের সভাপতিত্বে গত সোমবার একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা কোন কোন কক্ষে থাকেন, সেটার একটি ডেটাবেজ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
প্রাধ্যক্ষ আবদুল জলিল পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাত্র দেড় মাস আগে দায়িত্ব পেয়েছি। কিন্তু হলের যাচ্ছেতাই অবস্থা। ৮০ শতাংশ আসনে আবাসিকতা নেই। এটা ঠিক করতে কাজ করা হচ্ছিল। এ জন্য সব ছাত্রের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছিল। এমনকি ছাত্রলীগের নেতারা সহযোগিতা করার কমিটমেন্ট করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা সেটা রাখেননি।’
তিনি বলেন, গতকাল রাতে শিক্ষক–কর্মকর্তাদের নিয়ে হলে কাজ করার সময় ছাত্রলীগের নেতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনিসহ সবাই নিচে চলে যান।
প্রাধ্যক্ষ আরও বলেন, কক্ষে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দাবি, তাঁদের নিয়ে কাজ করতে হবে। এটা সম্ভব নয় জানালে তাঁরা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাঁর কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের অন্যায্য কথামতো চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা শোভা পায় না। বিষয়টি প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে (কোষাধ্যক্ষ) জানানো হয়েছে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। তবে ২৪ সদস্যের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি আংশিক কমিটি আছে। সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি। একপর্যায়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।