খুলনা বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতালে ২৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
খুলনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর চাপ পড়ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর। রোগীর চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শয্যাসংকটে অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে বারান্দায়। এতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার। তবে প্রতিদিন গড়ে সাধারণ রোগী ভর্তি থাকেন ১ হাজার ৪৫০ জন। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ডেঙ্গু রোগীরা। এ কারণে শয্যা না থাকায় বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের।
গত শনিবার ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভর্তি হওয়ার পর ১১টার দিকে তিনি মারা যান। ওই ব্যক্তির নাম নজির সরদার (৬০)। তাঁর বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে। তাঁকে নিয়ে চলতি বছর ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। তিনজনই খুলনার বাইরের জেলার। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন গত জুলাই মাসে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের একেবারে শেষ সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করার দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা মারা গেছেন, ভালো করে চিকিৎসা দেওয়ার সময়ও পাননি চিকিৎসকেরা। তবে আগে থেকে ভর্তি থাকা কোনো রোগী মারা যাননি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের পর থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকে খুলনার হাসপাতালগুলোতে। ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনায় এসেছেন। আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা বা এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ব্যক্তি। তবে এখন স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত ওই হাসপাতাল থেকে যত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, তার ৮৫ শতাংশের বেশি খুলনার বাইরের জেলার। তারা বলছে, রোগী বাড়লেও স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। তবে অধিক রোগীর চাপে ডেঙ্গু রোগীদের শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীকে বারাদ্দায় থাকতে হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে শনিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪০ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ৭২ জন।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ২০। তবে রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে মেডিসিন ওয়ার্ডের আওতায়। ওই হাসপাতালে পাঁচটি মেডিসিন ওয়ার্ড রয়েছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে শয্যা ফাঁকা থাকলে রোগীদের সেখানে রাখা হচ্ছে, তা না হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে শয্যা না থাকায় অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী বারান্দায় অবস্থান করছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক নিয়াজ মোস্তাফি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে যে ৭২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন, এর মধ্যে অধিকাংশই খুলনার বাইরের জেলার। যাঁরা নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি কোথাও ভ্রমণ করেছেন বা অন্য কোথাও কাজ করতেন এমন নয়। চলতি বছর ওই হাসপাতাল থেকে ৫৬৮ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন মাত্র তিনজন।
নিয়াজ মোস্তাফি চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে, আগ থেকেই এমন ধারণা করা হয়েছিল। সে জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুত করে রাখা হয়। আপাতত হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট নেই।
প্রায় এক মাসের মতো ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটও রয়েছে। এরপরও নতুন করে স্যালাইন ও কিট কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের ওষুধ ও মশারি দেওয়া হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা দাঁড়িয়েছে শয্যাসংকট। হাসপাতালে গড়ে ১ হাজার ৪৫০ জন রোগী থাকেন। সেখানে ওই পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী নতুন করে যুক্ত হওয়ায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
খুলনা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরে খুলনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল (সদর) হাসপাতাল ও উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।