টানা তিন দিন ভারী বৃষ্টির পর সিলেটে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রোদের দেখা মেলে। আজ শুক্রবার সকালেও সূর্য উঁকি দিয়েছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। কোথাও কোথাও কয়েক ইঞ্চি পরিমাণ পানি নেমেছে। তবে এখনো সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পাউবোর সূত্র অনুযায়ী, কানাইঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার, অমলশিদ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১ দশমিক ০২ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে শূন্য দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
এদিকে গতকাল জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নগরের ২৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩টি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ১ হাজার ৬০২। ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ হাজার ৭৮৬ জন ঠাঁই নিয়েছে। এ ছাড়া নগর ও জেলায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৯ লাখ।
একাধিক বানভাসি জানান, পানি কমতে শুরু করলেও এখনো অনেক বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি আছে। অনেক গ্রামীণ রাস্তা এখনো পানির নিচে। উপজেলার ভেতরে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন। চুলা ও নলকূপ তলিয়ে থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ খাবার ও সুপেয় পানির কষ্টে ভুগছে। গোচারণভূমি প্লাবিত হওয়ায় গোখাদ্যেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
নদী খননের দাবি বিএনপির
সিলেটে ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যার পর বিভিন্ন মহল থেকে জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারা খননের দাবি উঠেছিল। বিএনপিও একই দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এরপরও নদী খনন না হওয়াটা দুঃখজনক। গতকাল বিকেলে সিলেট জেলা বিএনপি গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এমন কথা বলেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে পুনরায় সুরমা-কুশিয়ারাসহ জেলার সব কটি নদ-নদী খননের দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিএনপি নন-নদী খননের পাশাপাশি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার এতে কান দেয়নি। উল্টো সিলেট অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করে হাওরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এখন লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বানভাসি মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদী খনন করে সিলেটবাসীকে বন্যা থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে প্রতিবছরই বারবার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
জেলা বিএনপির নেতারা বিবৃতিতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘এই ডামি সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায় নেই। বিএনপি অতীতেও বন্যার্তদের পাশে ছিল, এখনো আছে। বিএনপি জনগণের দল, তাই যেকোনো দুর্যোগে তারা সব সময় জনগণের পাশে থাকে।’
ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত
গতকাল রাতে সিলেট নগরের বন্যাকবলিত ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগর শাখা। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সিলেট জেলা শাখার সেক্রেটারি হাফিজ মাওলানা ইমাদ উদ্দিন, মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা মতিউর রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা শাখা গতকাল বিকেলে বন্যাকবলিত টুকেরবাজার এলাকা পরিদর্শন করে পানিবন্দী মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে। এ সময় বাসদ নেতারা সিলেটের বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, নগদ টাকা ও ওষুধ বরাদ্দের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সিলেট জেলা পুলিশের উদ্যোগে কোম্পানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে গতকাল দিনভর ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ২০০ বানভাসিকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুনের উদ্যোগে জেলার প্রতিটি থানায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।