ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে দুই বংশের সংঘর্ষ
ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে দুই বংশের সংঘর্ষ

ভৈরবে আবার কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ২৫

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। পূর্ববিরোধের জেরে আজ বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া সংঘর্ষ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছিল। সন্ধ্যা ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বংশ দুটির মধ্যে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিনবার বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজনের মৃত্যু হয়। আর ১৯ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত মোট সাতবার সংঘর্ষ হয়েছে। মারা গেছেন উভয় পক্ষের তিনজন। আজ আহত ব্যক্তিরা ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানান, মৌটুপি গ্রামে সরকারবাড়ি ও কর্তাবাড়ি প্রভাবশালী দুটি বংশ। দুই বংশের বিরোধ স্বাধীনতার আগে থেকে। বর্তমানে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। সরকারবাড়ির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ সরকার। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁরা আগেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত কর্তাবাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জুলাই মারা যান। এ ঘটনায় সরকারিবাড়ির লোকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। বিরোধ মেটাতে সালিসের দিন নির্ধারণ করা হলেও কর্তাবাড়ির লোকজন ঘোষণা দেন, সরকারবাড়ির একজনকে হত্যার আগে কোনো মীমাংসা নয়। এ অবস্থায় নাদিম হত্যার বদলা নিতে ১৩ সেপ্টেম্বর কর্তাবাড়ির লোকজন সরকারবাড়িতে হামলা করেন। ওই দিন বল্লমবিদ্ধ হয়ে সরকারবাড়ির ইকবাল মিয়া মারা যান।

ওই ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। এরপর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। ওই ঘটনার সূত্র ধরে ৩১ অক্টোবর দুপুরে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা দিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে বল্লমবিদ্ধ হয়ে কাইয়ুম মিয়া মারা যান। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন কর্তাবাড়ির পাঁচজন এবং সরকারবাড়ির তিনজন। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উভয় পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে। সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে।

কর্তাবাড়ির নেতা তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারবাড়ির লোকজন উসকানি দিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত করেন। প্রতিপক্ষরা আরও লাশ চায়। সরকারবাড়ির নেতা শেফায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলমান ঘটনায় আমাদের বংশের দুজনকে খুন করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে খুন না করা পর্যন্ত কর্তাবাড়ির লোকজনের নাকি ঘুম হবে না। এ কারণে আজ আবার সংঘর্ষ শুরু করেছে।’

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ জানান, মৌটুপি গ্রাম নিয়ে পুলিশকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। সংঘর্ষ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। এখন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে।