লটকন বাগানে কাজ করছেন এক বাগানি। গতকাল খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে
লটকন বাগানে কাজ করছেন এক বাগানি। গতকাল খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে

আগে গাছের নিচে পড়ে থাকত, এখন চাষ হয় বাণিজ্যিকভাবে

কয়েক বছর আগেও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের বনজঙ্গলে জংলি গাছ হিসেবে জন্মাত লটকন। ফল পেকে পড়ে থাকত গাছের নিচে। কেউ কেউ নিতান্ত শখের বশে নিজেরা খাওয়ার জন্য বাড়ির আশপাশে লাগাতেন দু-একটা গাছ। কিন্তু বর্তমানে এ ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বাজারে চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার জংলিটিলা এলাকার লটকনবাগানের মালিক অনিমেষ চাকমা বলেন, ১৫ বছর ধরে তাঁর বাগানের ৫০০টি গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে লটকন বিক্রি করছেন। তিনি খুচরা বিক্রি করেন না। তবে পৌরসভা ও জেলা পরিষদের অতিরিক্ত টোল এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এ বছর বাইরের ব্যবসায়ীরা আসবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তায় আছেন।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় লটকন চাষ হয়েছে ১৩৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৮৬৩ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ১৭৩ হেক্টর জমিতে। এবার আরও বেশি ফলন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলার বাগানিরা জানান, লটকনগাছে অনেক লাভ। গাছ লাগানোর পর বেঁচে গেলে আর পরিশ্রম করতে হয় না। গোবর আর জৈব সার ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে না। মাটির উর্বরতাই লটকনগাছের মূল উপাদান। ছায়াযুক্ত জায়গা লটকন গাছের জন্য উপযুক্ত স্থান।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালা পর্যন্ত ঝুলছে থোকায় থোকায় ফল। কাঁচা ফলের রং সবুজ এবং পাকা ফলের রং হালকা হলুদ। ভেতরে দুই থেকে চারটি বীজ রয়েছে।

ফল ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান হাসান বলেন, ‘খাগড়াছড়ির উৎপাদিত লটকন রসালো, সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে চাহিদা রয়েছে। পাহাড়ের ফল ফরমালিনমুক্ত ও সুস্বাদু। প্রতি কেজি পাইকারি ৫০-৬০ টাকায় কিনে নোয়াখালী ও ফেনীতে নিয়ে গিয়ে ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি করছি।’

পানছড়ি পুজগাং এলাকার অনন্ত চাকমা এ বছর ঘরে বসে ২৬ হাজার টাকার লটকন বিক্রি করেছেন। তাঁর বাড়ির পাশে ১১টি লটকনগাছ থেকে লটকন বিক্রি করে তিনি এই টাকা পেয়েছেন। গাছে এখনো প্রচুর লটকন আছে।

আলুটিলা এলাকার চাষি উজ্জ্বল ত্রিপুরা বলেন, ‘ছায়াযুক্ত একটি পাহাড়ের খাদে জুমচাষ ভালো হতো না। তাই অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে ১১ বছর আগে ৫৬টি লটকনগাছ লাগিয়েছিলাম। তেমন পরিচর্যা না করেও গাছের চার বছর হওয়ার পর ফলন আসা শুরু করেছে। আশা করি, এই বছর ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।’

খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মালেক বলেন, খাগড়াছড়ির মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য উপযোগী। লটকন চাষে তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। পাহাড়ের যেকোনো জায়গায় লাগালেই ভালো ফলন দেয়। তাই চাষিরা লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।