আদালতপাড়ার টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। নেই পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা। কোর্ট ফির তীব্র সংকটও রয়েছে।
বদলির কারণে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারকের পদ শূন্য আছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে। একই আদালতের অতিরিক্ত বিচারকের পদ খালি রয়েছে তিন মাস ধরে। ফলে বিচারাধীন মামলাগুলো ঝুলে আছে। জামিনের শুনানি হচ্ছে না ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের। বিচারপ্রার্থীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের আদালতপাড়ায় গেলে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা এ বিষয়টি প্রথম আলোর প্রতিবেদককে জানান। সরেজমিনে দেখা গেছে, আদালতপাড়ার টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী থাকায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া নেই পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থাও। কোর্ট ফির তীব্র সংকটও রয়েছে আদালতপাড়ায়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, মহানগর দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের পদ শূন্য থাকায় বিচারপ্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। বিচারক না থাকায় ফৌজদারি মামলার আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে পারছেন না। আবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে জামিনের দরখাস্ত করার বিকল্প সমপর্যায়ের আদালত না থাকায় ফৌজদারি মামলার বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
একাধিক বিচারপ্রার্থীর অভিযোগ, ১০ তলাবিশিষ্ট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন এবং ৫ তলাবিশিষ্ট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রতিটি তলাতেই একাধিক টয়লেট রয়েছে। তবে এসব টয়লেটের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা অবস্থায় থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টয়লেটে থাকা অনেক বেসিনের টেপ বিকল হয়ে আছে। অনেক টয়লেটে নেই বদনাও। ব্যবহারের অনুপযোগী টয়লেটের কারণে নারী ও বয়স্ক বিচারপ্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছেন বলে অনেকে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় মহানগর দায়রা জজ এবং তৃতীয় তলায় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অবস্থান। এসব তলার টয়লেটগুলো অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন। একই অবস্থা দেখা গেছে, জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনেও। দুটো ভবনের মেঝে ও সিঁড়ির স্থানে স্থানে পানের পিক ফেলে লাল করে ফেলা হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট আছে। এরপরও নিয়মিত কর্মীদের পাশাপাশি দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক নিয়োজিত করে টয়লেট ও আদালত ভবন নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।
একাধিক আইনজীবী জানান, স্ট্যাম্পের সববরাহও তুলনামূলকভাবে কম। এতে আইনজীবীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ নোটারি স্টাম্পও অহরহ বিক্রি হচ্ছে। তবে সিলেট জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, লাইসেন্সধারী বৈধ ব্যবসায়ীরা জাল কোর্ট ফি বিক্রি করছেন না। আদালতপাড়ায় থাকা অর্ধশতাধিক পানের দোকান, বই, ফটোকপি ও স্টেশনারি দোকানে জাল কোর্ট ফি বিক্রি হচ্ছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর জাল কোর্ট ফি বিক্রিয়কারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালানোর পর এখন এদের উৎপাত কমেছে।
জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযানের পর বৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে কোর্ট ফির চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করে আদালত থেকে বৈধ কোর্ট ফি–ও অবৈধ আখ্যা দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় বৈধ ব্যবসায়ীরা কোর্ট ফি ট্রেজারি থেকে আনেননি। এতে কোর্ট ফির সংকট বেড়েছিল। তবে গত রোববার বিষয়টির সমাধান হওয়ায় পুনরায় কোর্ট ফি ট্রেজারি থেকে ভেন্ডার ব্যবসায়ীরা উত্তোলন করেছেন। এখন আর সংকট থাকবে না।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ট্রেজারি) এন এম ইশফাকুল কবীর বলেন, মেশিন-সংক্রান্ত জটিলতায় বৈধ কিছু কোর্ট ফি রিজেক্ট করা হয়েছিল আদালত থেকে। তবে গত রোববার এ বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। পরে সব বৈধ ভেন্ডার ব্যবসায়ীরা কোর্ট ফি ট্রেজারি থেকে উত্তোলন করেছেন।