চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরাতন বাস্তপুর গ্রামের বাড়িতে গুলিতে আহত মোফাইল হোসেন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরাতন বাস্তপুর গ্রামের বাড়িতে গুলিতে আহত মোফাইল হোসেন

গুলিতে আহত শ্রমিক মোফাইলের চিকিৎসা নিয়ে অনিশ্চয়তা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে আহত মোফাইল হোসেনের (২২) চিকিৎসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাঁর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। ঢাকায় বৈদ্যুতিক পাখা কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলিতে ডান পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় এটি জোড়া লাগাসহ ক্ষত সারতে টানা ৯ থেকে ১০ মাস চিকিৎসা নিতে হবে। এ জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন।

গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরাতন বাস্তপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মোফাইলের সঙ্গে। মোফাইল বলেন, তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে প্রদীপ সিলিংফ্যান কারখানায় উৎপাদন বিভাগে কর্মী হিসেবে সাত মাস ধরে চাকরি করছেন। তাঁর উপার্জনে বাড়িতে মা-বাবাসহ ভাই-বোনের সংসার ভালোই চলছিল। তবে গুলিতে আহত হওয়ার পর ওই কারখানায় খবর পাঠানো হলেও কেউ তাঁর খোঁজ নেয়নি। ন্যূনতম সহযোগিতাও করেনি।

মোফাইল বলেন, ‘১৯ জুলাই রাত ১২টার দিকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া গুলি আমার ডান ঊরুতে ঢুকে হাড় ভেঙে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। আন্দোলনে অংশ নেওয়া বন্ধুরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে (সালমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার) নিয়ে ভর্তি করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২১ জুলাই বিকেলে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানে ৩৫ দিন চিকিৎসা শেষে ২৫ আগস্ট গ্রামের বাড়ি এসেছি। চিকিৎসকেরা জানান সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আবারও হাসপাতালটিতে যেতে হবে।’

মোফাইলের বাবা একজন রাজমিস্ত্রি। এত দিন চিকিৎসা চালানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। মোফাইলের বাবা হাফিজুল ইসলাম জানান, তিনি নিজেই হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। ছয়–সাত মাস ধরে ছেলের উপার্জনেই তাঁদের পাঁচ সদস্যের পরিবারে খাওয়াদাওয়াসহ সবকিছু চলছিল। পায়ে গুলি লাগার পর থেকে ছেলের ইনকাম বন্ধ। ধার-দেনা করে সংসার চালান। ওষুধ কিনতে পারছেন না। চিকিৎসক বলেছেন, এখনো ১০ মাস চিকিৎসা চালাতে হবে। তাঁর পরিস্থিতি খারাপ। কীভাবে দিন চলবে সেটিই ভেবে পাচ্ছেন না। তার ওপর চিকিৎসার খরচ কোথায় পাবেন?

হাফিজুলের কথার রেশ ধরেই মোফাইলের মা ফরিদা খাতুন বলেন, ‘ছেলে এক মাস ১০ দিন বেকার হয়ে পড়ায় খুপ অসুবিধায় আচি। খাওয়া-পরারই ঠিক নেই। সরকার সহযোগিতা না কললি ছেলের চিকিৎসা চালাইনো সম্ভব হবে না।’

মোফাইল জানান, ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাঁর ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক মাস ছয় দিন চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে ২৫ আগস্ট অ্যাম্বুলেন্সে বাড়িতে ফিরেছেন। পরবর্তী ২০ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো খরচ নেয়নি। চিকিৎসা ফলোআপের জন্য প্রতি মাসে ঢাকায় যেতে হবে; কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে যাওয়া-আসাসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং টানা চিকিৎসায় অনেক টাকার প্রয়োজন। যা তাঁর পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন।