গত তিন মাস ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে দেশটির স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী রাখাইন আর্মি
গত তিন মাস ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে দেশটির স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী রাখাইন আর্মি

এক দিন বন্ধের পর মধ্যরাতের বিস্ফোরণে আবার কাঁপল টেকনাফ

মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের জেরে এক দিন বন্ধের পর আবার বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপল কক্সবাজারের টেকনাফ। রাখাইনের মংডু টাউনশিপের আশপাশের গ্রাম থেকে গতকাল শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে আবার বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান টেকনাফের বাসিন্দারা।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছয়টি ও রাত সাড়ে ১২টার দিকে থেমে থেমে তিনটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নাফ নদীর তীরে টেকনাফ পৌরসভা, সদর, সাবরাং ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। তবে রাত একটার পর থেকে আজ রোববার বেলা একটা পর্যন্ত বিস্ফোরণের কোনো শব্দ শোনা যায়নি। এর আগে শুক্রবার সীমান্তের ওপারে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার বেলা একটা পর্যন্ত বিস্ফোরণের কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে বাড়িঘর কেঁপে। প্রথমে সবাই মনে করেছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে। যেভাবে বাড়িঘর কেঁপেছে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। তিনি বলেন, গত রাতের বিস্ফোরণে তিনি নিজেও ভয় পেয়েছেন। বিস্ফোরণের শব্দে সাবরাংসহ পুরো টেকনাফ কেঁপে ওঠে। এতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, রাতে ওপারের বিস্ফোরণে এপারের নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, কায়ুকখালীয়পাড়া, পল্লানপাড়া, কুলালপাড়া, খানকার ডেইলসহ কয়েকটি গ্রাম কেঁপে ওঠে। সেন্ট মার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপে বসবাসকারীদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে মানুষ যাতায়াত করতে পারছেন না। নৌপথটি বন্ধ থাকায় দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষ চিন্তিত। কারণ, বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে চলাচল করতে হচ্ছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দুটি শহরসহ দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডু দখলের জন্য লড়ছে তারা। ১০-১২ দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার রাত থেকে আবার হামলা শুরু হয়। বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইনে বিস্ফোরণের ঘটনায় টেকনাফ সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় (নাইক্ষ্যংদিয়া অংশে) দুই দিন ধরে অবস্থান করা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি গতকাল সকালে সরে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজিবির মহাপরিচালক বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।