সেচযন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে নিচু জায়গায় পানি ধরে রেখে পাট জাগ দিচ্ছে। গত রোববার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নে
সেচযন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে নিচু জায়গায় পানি ধরে রেখে পাট জাগ দিচ্ছে। গত রোববার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নে

কৃত্রিম উপায়ে পানির ব্যবস্থা করে পাট জাগ, লোকসানে কৃষক

বাড়ির সামনে সড়কের ধারে নিচু জায়গা দুই পাশে বাঁধ দিয়ে আটকানো হয়েছে। খেতের এক পাশেই বসানো হচ্ছে সেচযন্ত্র। সেচযন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে ওই নিচু জায়গায় পানি ধরে রেখে পাট জাগ দেওয়া হবে। খাল–বিল ও পুকুরে পানি না থাকায় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের কামারদাহ গ্রামের বাসিন্দারা এভাবেই কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি করে পাট জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

গত রোববার বালিয়াকান্দি উপজেলার অধিকাংশ এলাকাতেই এমন চিত্র দেখা যায়। মাঠের পর মাঠে পড়ে আছে পাট। পানির অভাবে সময়মতো না কাটায় খেতেই নষ্ট হচ্ছে। কেউ বাড়ির পাশে নিচু জমি, ডোবায় কৃত্রিম উপায়ে পানির ব্যবস্থা করছেন। কেউ বাড়তি খরচ করে নছিমন, ঘোড়ার গাড়িতে করে দূরের বিল বা পুকুরে জাগ দিচ্ছেন। প্রতি পাখি (স্থানীয় হিসাবে ২২ শতাংশে এক পাখি) জমিতে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।

কামারদাহ গ্রামের কৃষক রব মোল্লা বলেন, ‘আমরা কী যে বিপদে পড়ছি, তা বলতে পারছি না। পানির অভাবে কোথাও পাট জাগ দিতে পারছি না। উপায় নেই, তাই রাস্তার ধারে শুকনা খালে দুই পাশ আটকে মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে পাট জাগ দেব, খেতে ধান লাগাব।’

মোতালেব মোল্লা নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘২২ হাজার টাকা খরচ করে সেচযন্ত্র এনেছি। সেচের সাহায্যে পানি দিয়ে পাট জাগ দেব, ধানের আবাদ করব। খেত থেকে পাট আনতে ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া দিতে হচ্ছে দুই হাজার টাকা, পাখিপ্রতি কাটতে নিচ্ছে তিন হাজার টাকা। এরপর এই সেচযন্ত্র বসানো, শ্রমিক দিয়ে পাট জাগ দেওয়া, ধোয়া ও শুকাতেও খরচ হচ্ছে। এতে পাখিপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।’

নারুয়া ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের কৃষক ইউসুফ খান জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে পাট বপন করেছেন। পানি না থাকায় এখনো সব পাট কাটা শেষ করতে পারেননি। বন্যার পানি নেই, খাল খনন নেই বলে এ অঞ্চলে পানি আসে না। শ্যালো ইঞ্জিনের সাহায্যে পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।

পাট জাগ দেওয়ার জন্য কৃত্রিমভাবে পানি তুলছেন কৃষকেরা

আলিয়া মধুপুর গ্রামের ডোবায় পাট ধোয়ায় ব্যস্ত শ্রমিক টোকন খান বলেন, এক কিলোমিটার দূর থেকে পাট আনতে আটিপ্রতি এক টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। বিঘাপ্রতি পাট উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় চার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ মণ পাট হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে সাধারণ মানের পাট ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং ভালো মানের পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পানির অভাবে কৃষকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে নিচু জমি বা গর্ত করে কৃত্রিম উপায়ে পানির ব্যবস্থা করে পাট জাগ দিচ্ছেন। আমি সরকারিভাবে এ অঞ্চলে খাল খনন করার দাবি জানাচ্ছি।’

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছর প্রায় ১২ হাজার ৩৪৫ হেক্টর আবাদ হয়েছিল। পাট চাষে আগ্রহ থাকলেও স্থায়ীভাবে সমস্যা দূর না হলে আগামীতে আগ্রহ হারাবে। বালিয়াকান্দি সদরসহ নারুয়া, ইসলামপুর ও জঙ্গল ইউনিয়নে খাল খনন হলে পানি সমস্যা দূর হতো। আপাতত সেচযন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে পানির ব্যবস্থা করে কৃষকেরা পাট জাগ দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ পাট কাটা হয়েছে। বৃষ্টি আর কৃত্রিম উপায়ে পানির ব্যবস্থা না হলে কৃষকদের বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।