পঞ্চগড়ে যাঁরা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করছেন, ৭ জানুয়ারির পর নৌকার আশপাশে দেখলে তাঁদের পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। গতকাল রোববার রাতে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের কাজীরহাট বাজারে পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়ার নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের সময় তিনি ওই কথা বলেন। ইতিমধ্যে ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
হুমকি দেওয়া মো. নুরুজ্জামান পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক। তিনি সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
কাজীরহাট বাজারে মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত নির্বাচনী সভায় অমরখানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েদ আলী সহ অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন না।
ভিডিওতে দেখা যায় মাইকে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা নৌকাকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন চলেছে, এখন নৌকার বিরোধিতা করে, এদের চিহ্নিত করে রাখবেন। ৭ তারিখের পর এই সব লোককে নৌকার আশপাশে দেখলে প্রয়োজনবোধে তাদের ঠ্যাংগুলা (পাগুলো) ভেঙে দেওয়া হবে। এদের খন্দকার মোশতাক বলা হয়।’
পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়ার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া এই আসনে আরও চারজন প্রার্থী রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ইঙ্গিত করে বক্তব্যে মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা নৌকার পতাকাতলে দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়েছে, এখন নৌকার বাইরে তারা অন্য সুর ধরেছে, এদের চিহ্নিত করে রাখবেন। কারণ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই মার্কাটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের মার্কা, এই মার্কা জননেত্রী শেখ হাসিনার মার্কা, এই মার্কার যেসব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিরোধিতা করে, তাদের খন্দকার মোশতাক বলতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই।’
মো. নুরুজ্জামান আরও বলেন, ‘৭ জানুয়ারি আমাদের যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, আপনারা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে সিলটি দিয়ে নাঈমুজ্জামান মুক্তাকে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে আমরা বিজয় উল্লাস করতে চাই। আপনারা সবাই সজাগ থাকবেন। গন্ডগোল করার কোনো দরকার নাই। আজকে আমাদের নৌকা মার্কার যে ভোটগুলা আছে, এই ভোটগুলাই যথেষ্ট। সকাল সকাল মা-বোনদের পাঠিয়ে দেবেন ভোটকেন্দ্রে।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি বিষয়টি দেখছে। তদন্ত করে ওই কমিটি বিধি অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়ার এক সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নৌকা মার্কা ও নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন ও নির্বাচনী সংযোগ করলে সেই সব সমর্থকদের হাড়হাড্ডি ভেঙে দেবেন বলে কর্মী-সমর্থদের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।