লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে নেসকোর কার্যালয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে হামলা ও প্রকৌশলীসহ কর্মচারীরা লাঞ্ছিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েও কোনো মামলা হয়নি। নেসকোর পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ থানায় কোনো লিখিত অভিযোগও করা হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির আজ বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কালীগঞ্জ নেসকোর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরসহ প্রকৌশলী-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশ্নে ওসি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল রাতে কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (ওসি) করা হয়েছে। তিনি এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
গতকাল ঘটনার পর লাঞ্ছিত নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাস প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেও আজ সকাল থেকে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে নেসকোর কালীগঞ্জ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের কাউকে পুলিশ আটক করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, নেসকোর মতো গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যদি এভাবে হামলা ও ভাঙচুর হতে পারে, প্রকৌশলীরা অফিসে লাঞ্ছিত হন, শুধু মন্ত্রিপুত্রের সঙ্গে দেখা না করার জন্য, তাহলে হামলাকারীদের হাত থেকে কীভাবে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবেন?
কালীগঞ্জ নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরসহ প্রকৌশলী-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বগুড়ার নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এলাকায় যাবেন।মোখলেছুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী, রংপুর নেসকোর বিভাগীয় কার্যালয়
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর নেসকোর বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কালীগঞ্জ নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরসহ প্রকৌশলী-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বগুড়ার নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এলাকায় যাবেন। তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে গতকাল দুপুরের হামলার ঘটনার পর বেলা তিনটার দিকে কালীগঞ্জের কাশিরাম মৌজায় অবস্থিত নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন কর্তব্যরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
কালীগঞ্জ নেসকোর কার্যালয়ে তালা দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন পিয়ন ও আয়ার একজন মাজেদা বেগম আজ বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি গতকাল স্যারদের নির্দেশে অফিসের দরজায় তালা দিয়েছি।’ গতকালের ঘটনার ব্যাপারে মাজেদা বলেন, ‘গতকাল দুপুরে ওরা যখন হইহল্লা করতে করতে অফিসে ঢুকে রকি চন্দ্র দাস স্যারকে গালাগালি আর মারতে চাইল, আমি তাদেরকে বলি, আমি স্যারের সামনে দাঁড়াইলাম, আগে আমাকে মারতে হবে। ওরা তখন ধাক্কাধাক্কি শুরু করল, আমার শরীর হাত-পা কাঁপতে ছিল। আমি প্রাণভয়ে দৌড়ে পাশের রুমে গিয়ে পড়ে যাই। এরপর কী হয়েছে আর কিছু বলতে পারি না।’
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, তিনি আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নেসকোর কালীগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে অফিসটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। অফিসের আশপাশে কয়েকজন স্টাফ ছিলেন। তাঁদেরকে বললে তাঁরা অফিসে ঢোকার দরজার তালা খুলে দেন। তিনি ভেতরে ঢুকে কক্ষগুলো দেখেন। এরপর অফিস খোলা রাখতে তাঁদেরকে বলে নিজের অফিসে ফিরে আসেন। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নেসকোর একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (তিনি নামটা স্মরণ করতে পারছিলেন না) বলেছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার নেসকোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এলাকায় আসবেন।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদের ডাকে দেখা করতে না যাওয়ায় গতকাল বেলা দুইটার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল, সহসভাপতি নুরুন্নবীসহ ৮ থেকে ১০ জন নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাসের অফিসকক্ষে আসেন। তাঁরা রকি চন্দ্র দাসকে বলেন, ‘তুই জানিস রাকিব কে? তোকে এখানে মার্ডার করলে তোর কোন বাপ বাঁচাতে আসবে, তুই কাউকে পাত্তা দিস না।’ এরপর তাঁরা নেসকো অফিসের আলমারি ভাঙচুর করেন, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ভেঙে ফেলেন এবং উপসহকারী প্রকৌশলীদের চড়থাপ্পড় দিয়ে বের করে দেন। এ সময় কর্মচারীদেরও মারধর করা হয়।