বরিশাল সিটি নির্বাচন

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি, অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

বরিশাল সিটি করপোরেশন
বরিশাল সিটি করপোরেশন

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে গণসংযোগ চালানোয় তাঁর কয়েকজন কর্মীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ওরফে মান্নাসহ তাঁর সহযোগীরা এ হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে বরিশাল নগরের কাউনিয়া থানায় গতকাল রোববার রাতে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী মো. সোহাগ নামের স্থানীয় এক ছাত্রলীগ কর্মী। জিডিতে রইস আহম্মেদ, তাঁর ভাই রিসাদ আহমেদসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে আরও ২০ থেকে ২৫ জন জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে। রইস আহম্মেদ বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জিডিতে মো. সোহাগ অভিযোগ করেন, সাংগঠনিক কাজ শেষে তিনি (সোহাগ) কয়েকজনকে নিয়ে গত শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া জানুকি সিংহ রোডের ভূঁইয়াবাড়ির কাছে পৌঁছালে রইস আহম্মেদের নেতৃত্বে তাঁদের পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য আজ সোমবার দুপুরে রইস আহম্মেদের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলে তিনি ধরেননি।

বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা শুনেছি। তবে বিস্তারিত জানি না। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় নেই। কারণ, আমরা তো বলেছি, আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) এবং বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে আসার পর জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ যৌথ বর্ধিত সভা করে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামব। কিন্তু তাঁরা (আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীরা) তো আমাদের ছাড়াই নেমে পড়েছেন। সেখানে বিশৃঙ্খলা হলে আমাদের কী করার আছে?’

বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ কর্মী মো. সোহাগ বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডসহ কাউনিয়া এলাকায় কেউ প্রকাশ্যে কাজ করতে সাহস পাচ্ছেন না। গত শুক্রবার বিকেলে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে প্রথম জানুকি সিংহ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ শুরু করেন। এতে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ক্ষুব্ধ হন। তিনি আরও বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ শেষ করে শনিবার রাত পৌনে একটার দিকে সহযোগী সজীবুর রহমান ও সোহেল হাওলাদারকে নিয়ে বাসায় ফেরার সময় স্থানীয় ভূঁইয়াবাড়ির কাছে পৌঁছালে রইস আহম্মেদের নেতৃত্বে পরিচিতি ১৭ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জন এসে আমাদের ঘিরে ধরেন। তাঁরা আমার ঘাড়ের ওপর রামদা ধরে এবং সজীবুর রহমান ও সোহেল হাওলাদারকে পিস্তল ঠেকিয়ে জীবননাশের হুমকি দেন। ওই সময় রইস আহম্মেদ আমাদের প্রশ্ন করেন, “কাউনিয়ায় আমার চেয়ে বড় নৌকার কর্মী কে আছে?”’

এ ঘটনার পর নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল রাতে সোহাগ থানায় জিডি করেছেন। এ বিষয়ে আজ সোমবার দুপুরে বরিশাল নগরের কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০২২ সালের ২৩ জুলাই মহানগর ছাত্রলীগের ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদনের কথা জানিয়ে সংগঠনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান তাঁর ফেসবুক পেজে তালিকা প্রকাশ করেন। এতে আহ্বায়ক করা হয় রইস আহম্মেদকে। কমিটি তিন মাসের জন্য অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু এখনো সেই কমিটি বহাল। কমিটি ঘোষণার পর বরিশালে ছাত্রলীগের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে কমিটি বাতিলের দাবি তুলেছিলেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেতা রইস আহম্মেদ এবার বরিশাল নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।