ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন বলেছেন, ‘আমার এক নেতা একটু বাজে বক্তব্য দিছেন। তাঁকে ডিসি (জেলা প্রশাসক) সাহেব বলছেন, “গ্রেপ্তার করো।” আর আমি প্রার্থী, স্টিল এমপি, আমার গাড়ির সামনে লাঠি আর রামদা মিছিল করে, তাঁর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবেন না। আমি কিন্তু ছাইড়া দেওয়ার প্লেয়ার না। অতএব সময় থাকতে ব্যবস্থা নিয়েন। এটা আমার অনুরোধ, ধমক না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চরভদ্রাসন উপজেলার হাজিডাঙ্গী গ্রামে এক নির্বাচনী সভায় প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গত বুধবার নিক্সন চৌধুরীর গাড়ির সামনে লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে নৌকার সমর্থকদের মিছিল করার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের উদ্দেশে বক্তব্য দেন নিক্সন চৌধুরী।
নিক্সন চৌধুরী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ফরিদপুর-৪ আসনের টানা দুবারের সংসদ সদস্য। এবারও দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। সেখানে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ।
ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘গতকালকে (বুধবার) আমি পিয়াজখালি (সদরপুরের) দিয়া আসতিছি। হঠাৎ কইরা দুই শ মানুষ রামদা আর লাঠি নিয়া আমার গাড়ির সামনে-পিছে মিছিল দেওয়া আরম্ভ করল, “নৌকা, নৌকা”। আমি একজন সংসদ সদস্য। পিয়াজখালির শীর্ষ সন্ত্রাসী, ডাকাত, শিশু খানের নেতৃত্বে আমার গাড়ির সামনে লাঠি আর রামদা নিয়ে মিছিল করেছে। আমার কথা হইল, সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীতে দেখাতে চান একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। কাজী জাফর উল্যাহ সাহেবের নির্দেশে এই শিশু খান যখন আমার গাড়ির সামনে লাঠি-রামদার মিছিল করে, তখন কি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় না?’
নিক্সন চৌধুরী আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি লিখিত কমপ্লেইন দিছি ডিসির কাছে, নির্বাচন কমিশনের কাছে। আমি অপেক্ষা করতেছি। আমি নিজে ভিডিও করছি, সে লাঠি আর রামদার মিছিল করছে। আমি ডিসিকে জানাইছি, এসপিকে জানাইছি। আপনারা (ডিসি-এসপি) কাজী জাফর উল্যাহর জন্য সারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করবেন না। কারণ, উনি (কাজী জাফর) তো ভোট চাচ্ছেন না, লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন, ষড়যন্ত্র করতেছেন।’
কাজী জাফর উল্যাহর উদ্দেশে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘উনি আমার গাড়ির সামনে লাঠি ও রামদার মিছিল করাইতে পারেন। কিন্তু কাজী জাফর উল্যাহ সাহেব, আমরা কিন্তু ভয় পাওয়ার মানুষ না। দুজ্ঞা (দুইটা) রামদা আর ৫০টা লাঠি ভয় পাওয়ার প্লেয়ার কিন্তু নিক্সন চৌধুরী না। তাই আপনি তো ৫০টা লাঠি আর দুইটা রামদা বের করছেন। যদি প্রশাসন শিশু খানের বিচার না করে কালকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে, তাহলে ২৫টা ইউনিয়নে কত লাঠি আমি না বললেও বাইর হবে, আমি যদি না-ও বলি, তা–ও তো বাইর হবে।’
প্রসঙ্গত, নিক্সন চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী খাইরুল বাসারের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শিশু খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ফরিদপুর-৪ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন চৌধুরী স্বাক্ষরিত নোটিশে কাজী জাফর উল্যাহর সমর্থক শিশু খানকে আজ শুক্রবার বিকেল চারটার মধ্যে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। শিশু খান (৪৮) সদরপুরের ঢেউখালী ইউনিয়নের দুর্জন খার ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢেউখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের পেশকার শওকত মিয়া বলেন, আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শিশু খান আদালতে অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।