বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী এবারও নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো মিলছে না। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করতে তিনি ২ এপ্রিল লন্ডনে যান। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনুসারীরা। তবে কী আলাপ হয়েছে, তা জানতে না পারায় সিলেটে আরিফুল হকের কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচন নিয়ে এখনো দোটানায় আছেন।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবার বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দিয়েছেন। তাই ‘কর্মী-সমর্থকদের চাপে’ নির্বাচনে আগ্রহী আরিফুল হক প্রার্থিতা নিয়ে দোলাচলে পড়েন। এ অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে তিনি লন্ডনে যান।
গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয় আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে। নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিগগির আমি সিলেটে ফিরছি। দেশে এসেই এ ব্যাপারে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করব। এর বাইরে আপাতত আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। একটু অপেক্ষা করুন। আমার সিদ্ধান্ত দ্রুতই জানতে পারবেন।’
আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি বলেন, দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়ে আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটে অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন। দলমত–নির্বিশেষে সব মহলের কাছে তাঁর একটা গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি হয়েছে। ফলে, এবার নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁর জয়ের সম্ভাবনাও আছে। তবে যেহেতু তাঁর দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না, তাই অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন আরিফুল। এখন দেখার বিষয়, তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন কি না।
আরিফুল বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হিসেবে আছেন। পাশাপাশি সিলেট জেলা বিএনপিরও তিনি সদস্য। এর আগে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়ের ছাত্রদলের প্রভাবশালী এই নেতা।
এখন পর্যন্ত আরিফুল হক সিটি নির্বাচন নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার না করায় সিলেট নগরে দুটি বিষয় চাউর হয়েছে। এক পক্ষের অভিমত হচ্ছে, দল অংশ না নেওয়ায় আরিফুল নাগরিক সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। ১৫ এপ্রিল তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তাই এ সময় তাঁকে নগরবাসীর ব্যানারে বিমানবন্দরে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
অন্য পক্ষটি বলছে, নিজ দলের অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে আরিফুল নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তাই তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলে সিলেটের কোনো একটি সংসদীয় আসনে তাঁকে প্রার্থী করা হবে।
আরিফুলের ঘনিষ্ঠ সিলেট বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতাদের অনেকের সঙ্গে আরিফুলের সুসম্পর্ক নেই। তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। দলের বাইরেও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর আলাদা সুসম্পর্ক রয়েছে। এসব কারণে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য স্থানীয়ভাবে আরিফুলের ওপর আলাদা চাপ তৈরি হয়েছে। আপাতত ধোঁয়াশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি প্রার্থী হবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে অন্তত ১০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন।