এক বছরে রেললাইন থেকে ৬০ জনের লাশ উদ্ধার 

গাজীপুরে বেশ কয়েকটি অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। এগুলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে। 

গাজীপুর জেলায় ২০২২ সালে রেললাইন থেকে অন্তত ৬০ জনের লাশ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। আগের দুই বছর থেকে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। রেলওয়ে পুলিশ বলছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসতর্কতার কারণে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন, কেউবা আত্মহত্যা করেছেন। আবার অরক্ষিত রেলক্রসিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে।

টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ নূর মোহাম্মদ বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তবু এসব এলাকায় চলাফেরার ক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে অসচেতনতার বিষয়টি কাজ করছে।

রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুরের ধীরাশ্রম থেকে শ্রীপুরের কাওরাইদ ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর আউটার সিগন্যাল পর্যন্ত রেললাইন থেকে ৪৫ জনের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া গাজীপুরের ধীরাশ্রম থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এবং টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জের আড়িখোলা পর্যন্ত আরও প্রায় ১৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে গাজীপুরে রেললাইন থেকে ২০১৮ সালে ৪৮, ২০১৯ সালে ৫২, ২০২০ সালে ২৭ ও ২০২১ সালে ৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ট্রেন চলাচল দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় লাশের সংখ্যা কম বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত বছর গাজীপুর রেললাইন থেকে প্রথম লাশটি উদ্ধার করা হয় ৯ জানুয়ারি। এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস টঙ্গীর গাজীবাড়ি এলাকা অতিক্রম করার সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক বৃদ্ধ (৬৫) ও তরুণীর (২৫) প্রাণ যায়। রেললাইন থেকে বছরের শেষ লাশ উদ্ধার করা হয় ২২ নভেম্বর। এদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বড়নগর খঞ্জনা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় আহসান হাবিব (৩৮) নামের এক যুবক নিহত হন। 

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুরের জয়দেবপুর, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর; টঙ্গীর আরিচপুর, বউ বাজার, মধুমতী রেলগেট, বনমালা রেলগেট ও হায়দরাবাদ এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হায়দরাবাদ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রেললাইনের ওপর ভিড় জমান তরুণ-তরুণীরা। তাঁরা অনেক সময় লাইনের ওপর হাঁটাহাঁটি ও টিকটক ভিডিও বানান। এ সময় ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। টঙ্গীর বনমালা ও আরিচপুর রেললাইনে মানুষের ভিড় থাকে প্রতিনিয়ত। আরিচপুর রেললাইন এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ বাজার, সেখানে টঙ্গী ও উত্তরার মানুষ বাজার করতে আসেন। হুটহাট ট্রেন চলে এলে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা।

স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, শুধু ট্রেনে কাটা পড়া নয়, অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছিনতাইকারী ও যাত্রীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে এবং ছিনতাইকারীরা অনেককে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করে লাশ ফেলে চলে যায়। এমন ঘটনাও পাওয়া গেছে, দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ট্রেনে কাটা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য রেললাইনে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। এসব ঘটনার খুব একটা তদন্ত হয় না।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) গাজীপুরের সদস্য মুকুল কুমার মল্লিক বলেন, গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন এখনো অনেক অরক্ষিত রয়েছে। যার কারণে প্রায়ই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগ করা হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমে যাবে।

জয়দেবপুর জংশনের স্টেশনমাস্টার রেজাউল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে  বেশ কয়েকটি অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। এগুলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ছাড়া রেললাইনে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে কাটা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকে।