দুই শতাধিক মানুষ দিনভর গুনেও শেষ করতে পারেননি কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানের টাকা। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা মিলেছে বলে নিশ্চিত করেন মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূইয়া। তিনি বলেন, এবার টাকা অন্যবারের তুলনায় বেশি হওয়ায় গণনায় একটু সময় বেশি লাগছে।
প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সকাল থেকে টাকা গণনার কাজ চলছে। এই কাজে মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ কর্মী, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ সদস্য অংশ নিয়েছেন। মোট ২০৬ জন দিনভর টাকা গুনছেন।
আজ সকাল পৌনে নয়টার দিকে প্রায় তিন মাস পর আবারও কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে মিলেছে রেকর্ড ২০ বস্তা টাকা। এবার গণনা শেষে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ।
জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে আটটি দানবাক্স আছে। প্রতি তিন মাস পরপর এই বাক্সগুলো খোলা হয়। এবার দানবাক্স খোলা হয়েছে তিন মাস ছয় দিন পর।
এর আগে গত বছরের ১ অক্টোবর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ১৫ বস্তা টাকা। দিনভর গুনে পাওয়া গিয়েছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। তখন ৩ মাস ১ দিনে এই টাকা জমা পড়েছিল মসজিদের আটটি দানবাক্সে। এ ছাড়া পাওয়া গিয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন জিনিস দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, সকাল পৌনে ৯টায় ৮টি দানবাক্স খুলে ২০ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্দুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢালা হয়। এখন চলছে গণনার কাজ। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে।
দানবাক্স খোলার সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার অহনা জিন্নাত, শেখ জাবের আহমেদ, সুলতানা রাজিয়া, সহকারী কমিশনার মোছা. নাবিলা ফেরদৌস, মো. মাহমুদুল হাসান, রওশন কবীর, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তাও করা হয়। এ ছাড়া এই মসজিদের জমানো টাকা দিয়ে মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ এখানে সুন্দর একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে এক শ কোটির বেশি টাকা প্রয়োজন হবে।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসও মসজিদটিতে দান করা হয়।