নরসিংদীর পলাশে নিখোঁজের চার দিন পর সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার হওয়া সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যার আগে যৌন নির্যাতন করা হয়। পরে আসামি তাঁর স্ত্রী ও ছেলের সহযোগিতায় লাশটি শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গুম করেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ নিয়াজীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এ কথা জানান মামলার প্রধান আসামি জালাল শেখ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকতিয়ার উদ্দিন প্রথম আলোর কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় শিশুটির বাবা জালাল শেখ (৪৮), তাঁর স্ত্রী মাহফুজা শেখ (৩৯) ও ছেলে বিল্লাল শেখকে (২০) আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। তাঁদের আদালতে পাঠালে আসামি জালাল শেখ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরপরই উঠে আসে হত্যার আগে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি।
শিশুটির বাড়ি পলাশ উপজেলার একটি গ্রামে। তার বাবা কখনো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান, আবার কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মামলার প্রধান আসামি জালাল শেখকে শিশুটি দাদা বলে ডাকত।
সিসিটিভি ফুটেজ না দেখলে সন্দেহ করারও সুযোগ ছিল না। হত্যার পরও পরিবারটির তিন সদস্য স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। তাঁদের আচরণে সন্দেহজনক কিছু ছিল না। তাঁরা পালিয়ে পর্যন্ত যাননি। সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করার পরও ওই শৌচাগারই তাঁরা ব্যবহার করছিলেন। আমি তিনজনের ফাঁসি চাই।নিহত শিশুটির বাবা
২১ জুন বেলা ১১টায় পাশের বাড়ির উঠানে খেলার সময় নিখোঁজ হয় শিশুটি। দিনভর খোঁজাখুঁজি শেষে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির বাবা পলাশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও মেয়ের সন্ধান না পেয়ে গত সোমবার বিকেলে র্যাব-১১-এর নরসিংদী ক্যাম্পে জিডির কপি নিয়ে যান শিশুটির বাবা। র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার নিশাত তাবাসসুম ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি সিসিটিভি ফুটেজের সূত্রে বিল্লাল নামের এক তরুণকে আটক করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যেই হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর গত মঙ্গলবার সকালে বিল্লালদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক খুলে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
গত রোজার ঈদের ১৫ দিন আগে পাশের বাড়ির দুটি কক্ষ মাসিক দুই হাজার টাকায় ভাড়া নেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা জালাল শেখ, তাঁর স্ত্রী মাহফুজা শেখ ও ছেলে বিল্লাল শেখ। জালাল ও বিল্লাল ভ্যানগাড়িতে করে পলাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কুলফি মালাই আইসক্রিম বিক্রি করতেন।
র্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার নিশাত তাবাসসুম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল ওই শিশুটির হত্যাকাণ্ডে তাঁর বাবা জালাল শেখের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানান, হত্যার পর বিল্লাল ও তাঁর মা মাহফুজার সহযোগিতায় শিশুটির লাশ গুম করা হয়। পরদিন সকালে বিল্লালকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ওই সেপটিক ট্যাংক থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জালাল শেখ বলেন, তাঁদের আঙিনায় আরও কয়েকটি শিশুর সঙ্গে বালু ছোড়াছুড়ি করে খেলছিল সাড়ে তিন বছরের শিশুটি। তার ছুড়ে মারা বালু ছেলে বিল্লাল শেখের শরীরে গিয়ে পড়ে। রাগান্বিত হয়ে বিল্লাল তাকে ধরতে গেলে উল্টো ঘুরে দৌড় দিতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যায় শিশুটি। পরে ওই বাড়ির রান্নাঘরে দুজনই পরিচ্ছন্ন হতে যায়। বিল্লাল বেরিয়ে আসার পর শিশুটি পরিচ্ছন্ন হচ্ছিল। ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে তার ওপর কুনজর পড়ে জালাল শেখের। তিনি শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করেন। শিশুটি এতে চিৎকার করে উঠলে তার নাক-মুখ চেপে ধরেন জালাল। এতে দম বন্ধ হয়ে মারা যায় শিশুটির। মারা যাওয়ার পর শিশুটির লাশ স্ত্রী মাহফুজা ও ছেলে বিল্লালের সহযোগিতায় শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে গুম করেন জালাল।
শিশুটির বাবা আহাজারি করে বলেন, প্রতিবেশী হিসেবে পরিবারটির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক খারাপ ছিল না। জালালের স্ত্রী মাহফুজাও তাঁদের ঘরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। তাঁরা এমন কাজ করে বসবেন, কল্পনা করতে পারছেন না তিনি। সিসিটিভি ফুটেজ না দেখলে তাঁদের সন্দেহ করারও সুযোগ ছিল না। হত্যার পরও পরিবারটির তিন সদস্য স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। তাঁদের আচরণে সন্দেহজনক কিছু ছিল না। তাঁরা পালিয়ে পর্যন্ত যাননি। সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করার পরও ওই শৌচাগারই তাঁরা ব্যবহার করছিলেন। এই তিনজনের ফাঁসি চান তিনি।