ঘোড়ার তেজে দৌড়ায় অর্ধশতাধিক পরিবার

ঘোড়া দি‌য়ে জমিতে মই দিচ্ছেন একজন। সম্প্রতি শেরপু‌রের না‌লিতাবাড়ী উপ‌জেলার গোল্লারপাড় গ্রামে
ছবি: আবদুল মান্নান

পাঁচ সদস্যের পরিবারে কৃষিশ্রমিক শামসু‌দ্দিন (৫৫) ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। একার আয়ে ঠিকমতো সংসার চ‌ল‌ত না। প্রতিবেশীর পরামর্শে স্থানীয় সমিতি থে‌কে ঋণ নিয়ে ১০ বছর আগে ১৫ হাজার টাকায় একটি ঘোড়া কেনেন।

এর পর থে‌কে গ্রামগঞ্জে মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি আবাদের মৌসুমে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করতে থাকেন। এভাবে শামসুদ্দিনের সংসা‌রে স্বাচ্ছন্দ্য আসে। তাঁর বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বালুঘাটা গ্রামে।

শামসু‌দ্দি‌নের মতো নালিতাবাড়ী উপ‌জেলার কলসপাড় ইউনিয়নের তিনটি গ্রা‌মের অর্ধশতাধিক পরিবার ঘোড়া দি‌য়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। গরুর চেয়ে ঘোড়া বেশি পরিশ্রমী ও রোগবালাই কম হওয়ায় এটি বেশ লাভজনক বলে জানান শামসু‌দ্দি‌ন। তিনি বলেন, একা সংসার নি‌য়ে হিম‌শিম খা‌চ্ছিলেন। ঘোড়াই যেন তাঁর পরিবারের হাল ধরেছে। ঘোড়া দিয়ে জমি মই দিলে একরপ্রতি এক হাজার টাকা পান। আবার জমি চাষ দিলে কাঠাপ্রতি (৫ শতাংশ) পান এক শ টাকা। প্রতিদিন একটি ঘোড়া দিয়ে দেড় থে‌কে দুই হাজার টাকা রোজগার করেন তিনি। এতে ঘোড়ার যাবতীয় খরচ চালিয়ে অনায়াসে তাঁর সংসার চলে যায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া, গোল্লারপাড় ও বালুঘাটা গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের আয়ের উৎস ঘোড়া। গ্রামাঞ্চলে গরু ও মহিষ দিয়ে হালচাষ করতে দেখা গেলেও ঘোড়া দিয়ে হালচাষ খুব একটা আগে হতো না। তবে এখন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করতে দেখা যাচ্ছে। বছরের কিছু সময় ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল আনা–নেওয়া করা হয়। এ ছাড়া বোরো ও আমন মৌসুমে চারা রোপণের আগে জমি তৈরির জন্য ঘোড়া দিয়ে মই দেওয়া হয়।

ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আশরাফ আলী। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে তিনি ঘোড়া দিয়ে জমি চাষাবাদ করছেন। সেই সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল টানারও কাজ করেন। ঘোড়া দিয়ে উপার্জনের টাকায় তাঁর সংসার চলে যাচ্ছে। ঘোড়া দি‌য়ে হালচা‌ষে খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরাও এতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বাজা‌রে ঘোড়ার দাম তুলনামূলক কম থাকায় এবং বেশি পরিশ্রমী হওয়ায় ঘোড়া পাল‌নে মানু‌ষের আগ্রহ বাড়ছে।
আবদুল ম‌জিদ, ইউপি চেয়ারম্যান, কলসপাড় ইউনিয়ন
কৃষিকাজে ঘোড়া ব্যবহার করছেন এক কৃষক। সম্প্রতি শেরপু‌রের না‌লিতাবাড়ী উপ‌জেলার গোল্লারপাড় গ্রামে

কলসপাড় ইউনিয়ন প‌রিষ‌দের (ইউপি) চেয়ারম‌্যান আবদুল ম‌জিদ ব‌লেন, আধুনিক কৃ‌ষিয‌ন্ত্রের পাশাপা‌শি তিনটি গ্রা‌মের অর্ধশতা‌ধিক দ‌রিদ্র মানুষ সারা বছর ঘোড়া দি‌য়ে বি‌ভিন্ন মালামাল প‌রিবহ‌ন ও কৃ‌ষি মৌসু‌মে হালচাষ ক‌রে থা‌কেন। এতে কৃষকদের চাষাবা‌দে খরচ কম হয়। সেই সঙ্গে ঘোড়ার মা‌লিক‌দের ভালো আয় হয়। বাজা‌রে ঘোড়ার দাম তুলনামূলক কম থাকায় এবং বেশি পরিশ্রমী হওয়ায় ঘোড়া পাল‌নে মানু‌ষের আগ্রহ বাড়ছে।