এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী জুলিয়া আক্তার (২০)। এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমে তাঁকে ফেল দেখানো হয়েছিল। ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফেল দেখানোর কারণে পরিবার খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদনের মাধ্যমে তার ফল পরিবর্তন হয়ে জিপিএ-৫ হয়। এবারের পরীক্ষার ফলাফলের পর তাঁর খুব ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে; কিন্তু শারীরিক কারণে মা–বাবা দূরে দিতে চান না।
জুলিয়া আক্তার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলামের মেয়ে। শিখা আর শিলা নামে তার আরও দুজন মেয়ে আছে, যাদের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ছেলে রাতুল (১৪) অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। মাঠে ১০ শতক চাষযোগ্য জমি আছে, এই জমি আর অন্যের খেতে কাজ করে সংসার চলে নজরুলের।
নজরুল ইসলাম জানান, তিনিও ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। বুদ্ধিও কম। ১০ বছর বয়স হওয়ার পর কথা বলতে পেরেছেন, তা–ও সব কথা ঠিকমতো বলতে পারেন না। এ জন্য তিনি স্কুলে যেতে পারেননি। যে কারণে তাঁর পড়ালেখা হয়নি। এ অবস্থায় কৃষিকাজ করে সংসার চালান। ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টে বেঁচে আছেন।
নিজে পড়ালেখা না করতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নিজে পড়ালেখা না জানলেও সব সময় চেয়েছি ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা শিখুক; কিন্তু বড় দুটি মেয়ে সেভাবে পড়ালেখা করেনি, তাই তাদের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে প্রতিবন্ধী। সে ঠিকমতো কথা বলতে ও শুনতে পায় না। তার পরও পড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। ছোট থেকেই ইশারায় বুঝিয়েছে সে পড়ালেখা করবে। বই পেলেই পড়তে বসে। মেয়ের এই ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে পড়ালেখা করাচ্ছি।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গ্রামের স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে জুলিয়া। এরপর কালীগঞ্জ শহরের সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ বছর ভোকেশনাল থেকে জুলিয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। নিজের মতো করে পড়ালেখা করত, বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাসও করত। সেখানেও শিক্ষকেরা পড়া জানতে চাইলে ইশারায় উত্তর দিত। এভাবে পড়ালেখা করে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফল প্রকাশের পর জানতে পারে, রসায়নে ফেল করেছে। বাংলায় এ, বাকি সব বিষয়ে এ+ পেয়েছে। পরে তার অনুরোধে খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করে পরিবার। পরে সে জিপিএ-৫ পায়।
জুলিয়ার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এসএসসি পাসের পর মেয়েকে কালীগঞ্জ শহরের শহীদ নূর আলী কলেজে ভর্তি করে দিই। সেখান থেকে এবার পরীক্ষা দেয় জুলিয়া। সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। জুলিয়ার এই ফলে পরিবারের সবাই খুশি। তবে মেয়ে ইশারায় বলতে চাচ্ছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে; কিন্তু এ অবস্থায় দূরে দিতে চাচ্ছি না।’
যশোর ইবনে সিনা হাসপাতালের চিকিৎসক নূর কুতুবুল আলমের বরাত দিয়ে বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্রোপচার করলে মেয়েটি ভালো হতে পারে। অস্ত্রোপচারে আনুমানিক তিন লাখ টাকা খরচ হতে পারে। তবে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়।
জুলিয়ার মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমরা সবাই খুশি। মেয়েটির চিকিৎসা করাতে পারলে পড়ানোর জন্য দূরে পাঠাতে পারতাম।’
এ বিষয়ে শহীদ নূর আলী কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদ সাত্তার তরু বলেন, তাঁরা মেয়েটিকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। মেয়েটিরও পড়ালেখার প্রতি খুব আগ্রহ। সে এবারও ভালো ফল করেছে। এখন ভালো জায়গায় ভর্তি হতে পারলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।