আনন্দ-বেদনা পরিমাপ করা যায় না কেন, প্রশ্ন শিক্ষার্থীর

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী
ছবি: জুয়েল শীল

শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করা যায় না কেন? গুণিতকের শেষ কোথায়? অনেক কিছু পরিমাপ করা যায়, কিন্তু আনন্দ–বেদনা পরিমাপ করা যায় না কেন? শিক্ষার্থীদের এমন সব মজার প্রশ্নে জমে উঠেছিল চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গণিত উৎসব।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় আজ শুক্রবার ছুটির দিনে এ আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। নগরের কোতোয়ালির সেন্ট প্লাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিত উৎসবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরের কোতোয়ালি এলাকায় অবস্থিত সেন্ট প্লাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজে গণিত উৎসবের উদ্বোধন হয়। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। এরপর সকাল ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৫০ শিক্ষার্থী। উৎসবের শেষ পর্বে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় আজ ছুটির দিনে এ আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনের সহযোগিতায় ছিলেন চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উপজেলার বন্ধুসভার বন্ধুরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি শিহাব জিসান ও ফাহিম উদ্দিন।

গণিত নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করছে আলোচকদের

প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন

উৎসবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেন আলোচকদের। গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার রায়, গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দে, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. ইফতেখার মনির ও সিএসই বিভাগের অধ্যাপক তৌফিক সাইদ। সঙ্গে ছিলেন সাহিত্যিক আনিসুল হক।

আদিব শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে বলে, অনেক কিছুই পরিমাপ করা যায়। কিন্তু আনন্দ-বেদনা পরিমাপ করা যায় না কেন? উত্তরে শিক্ষকেরা বলেন, পরিমাপ সব সময় কোনো নির্দিষ্ট স্কেল দিয়ে করতে হবে, এমন নয়। মনোবিজ্ঞানে একটি পরীক্ষা রয়েছে, যেটিকে ইংরেজিতে সাইকো মেট্রিক টেস্ট বলা হয়। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করা হয়। এসব প্রশ্নের সাহায্যে কে কতটুকু আনন্দিত, কে কতটুকু হতাশ, তা বের করেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং কী চিন্তা করতেন, তা প্রযুক্তির সাহায্যে বের করা যেত। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আনন্দ-বেদনাও পরিমাপ করা সম্ভব।

প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত এক শিক্ষার্থী

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহারা আক্তার জানতে চায়, সংখ্যা ও অঙ্কের মধ্যে পার্থক্য কী? জবাবে শিক্ষকেরা বলেন, অঙ্ক দিয়ে সংখ্যা তৈরি করতে হয়। সাধারণত ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোই অঙ্ক। এই অঙ্ক দিয়ে সংখ্যা তৈরি করা যায়। এ ছাড়া ২ একটি সংখ্যা এবং একই সঙ্গে একটি অঙ্কও।

শুধু আদিব কিংবা শাহারা নয়, তাদের মতো এমন আরও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। এই যেমন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহির তাইয়ান। তার প্রশ্ন ছিল, চুলায় কোনো কিছু সেদ্ধ করলে নরম হয়ে যায়, কিন্তু ডিমকে সেদ্ধ করলে শক্ত হয় কেন? এ প্রশ্নের পর শিক্ষকেরা তাকে মঞ্চে ডেকে নেন। পরে উত্তরের সঙ্গে তাকে একটি বিজ্ঞানচিন্তা দেওয়া হয়। অবশ্য সেরা প্রশ্নকারীদের উপহার হিসেবে বিজ্ঞানচিন্তা ও কিশোর আলো উপহার দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচকেরা

পরে সমাপনী বক্তব্যে আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের মজার মজার গল্প শোনান, পরামর্শ দেন, উৎসাহ জোগান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের চারপাশে যা কিছু আনন্দের, যা কিছু উপভোগের—সবকিছুই করব। আমরা বিজ্ঞান ক্লাব করব, পরিবেশ ক্লাব করব, বিতর্ক ক্লাব করব। আমরা গল্প পড়ব, উপন্যাস পড়ব, কিশোর আলো পড়ব, বিজ্ঞানচিন্তা পড়ব। পাশাপাশি রেজাল্টও ভালো করব।’

পুরস্কার পেল যারা

পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ১২৬ জনকে সনদ ও মেডেল দেওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, জুনিয়র ও প্রাথমিক—এই চার ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের এসব পুরস্কার দেওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে আছে চট্টগ্রাম কলেজের ওয়াহিদুল হক, ফাহমিদ হাসান ও সিদ্ধার্থ রিশিত চক্রবর্তী, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মো. আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের অরিত্র বড়ুয়া, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের অনিন্দ্য রাজ দাশ প্রমুখ। মাধ্যমিক শাখায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে আছে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সৌমিক সেনগুপ্ত, ইস্টার্ন রিফাইনারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ঐশি দাশ, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের নাইমুল হক সিদ্দিকী, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নাইলা কানিজ ফাহিমা, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অনন্যা সরকার প্রমুখ।

পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ১২৬ জনকে সনদ ও মেডেল দেওয়া হয়

জুনিয়র শাখায় সনদ ও মেডেল পেয়েছে চুয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাজমুস সাকিব, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের আহনাফ লাবিব, বাংলাদেশ নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ চট্টগ্রামের  মো. ওমর সামিন সরকার, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের এম এ জাওয়াদুল হক প্রমুখ।

প্রাথমিকে পেয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাঈদ মোহাম্মদ রাফান, এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জিমান আল মুন্তাজির, সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাফিদুল বারি, লাইমলাইট গ্রামার স্কুলের মুসাব্বির মোহাম্মদ জারির প্রমুখ।