ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে ঘিরে ঐক্য ফিরেছে বহুধারায় বিভক্ত আওয়ামী লীগে।
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন। এর মধ্যে সরাইলের ৯টি ইউনিয়নে আছেন ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ জন ভোটার এবং আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে আছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪০ জন ভোটার।
সরাইলে আওয়ামী লীগের তিনটি ধারা। এখানে প্রধান দুটি ধারার একটির নেতৃত্বে আছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। তিনি ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর দলীয় কোন্দলে খুন হওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদের স্ত্রী। অপর একটি ধারার নেতৃত্বে আছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর। তিনি ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন একটি অংশের নেতৃত্ব দেন।
দলীয় কোন্দলের কারণে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সরাইলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। কোন্দলের কারণে এখানে ১৯৭৩ সালের পর থেকে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী জিততে পারেনি।
একই অবস্থা আশুগঞ্জ উপজেলায়ও। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রধান চারটি অংশের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. মঈন উদ্দীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়া, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হানিফ মুন্সি এবং স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম। এর মধ্যে মো. মঈন উদ্দীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলার ছড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তবে ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট পেয়েও তিনি সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে পরাজিত হন। তিনি এখন সাত্তারের কলার ছড়ার পক্ষেই কাজ করছেন।
আসন্ন উপনির্বাচনে এ আসনটি উন্মুক্ত ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। তবে আগে থেকে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা মাঠে ছিলেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দীন ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতা শাহজাহান আলম। তাঁদের মধ্যে মঈন উদ্দীন ও মাহবুবুল বারী চৌধুরী প্রচারণা চালিয়েছেন জোরেশোরে। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে এই তিন নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
এখন আওয়ামী লীগের এ তিন নেতাসহ দুই উপজেলার বিভক্ত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্য দেখা গেছে। এই নেতাদের আগে কখনোই এক মঞ্চে দেখা যায়নি। কিন্তু উপনির্বাচনে তাঁরা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করছেন। গতকাল মঙ্গলবার সরাইল উপজেলা সদরের সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম মিলনায়তনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে কর্মিসভায় কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের সঙ্গে ছিলেন উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, রফিক উদ্দিন ঠাকুর, মাহবুবুল বারী চৌধুরী, মো. মঈন উদ্দীন, শাহজাহান আলম প্রমুখ। এ ছাড়া সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন আশুগঞ্জ উপজেলা আ. লীগের সভাপতি শফিউল্লাহ মিয়া, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি, সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের।
এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দল বড়। এখানে নেতৃত্বের জন্য প্রতিযোগিতা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, প্রতিহিংসা হয় না। দলকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য জননেত্রীকে আবার প্রধানমন্ত্রী করার জন্য দলের নির্দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তারেক রহমানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি (সাত্তার ভূঁইয়া) সাহসী পদক্ষেপ দিয়েছেন। তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সাত্তার সাহেব ভালো মানুষ। এ জন্য আমরা দলের নির্দেশে তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।’