আন্দোলনরত কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে

দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী মোহাম্মদ আলী সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে লাঞ্ছিতের অভিযোগ তুলে ধরেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দৈনিক মজুরিভিত্তিক এক কর্মচারীকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। ওই কর্মচারীর নাম মোহাম্মদ আলী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় মোহাম্মদ আলী সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, গতকাল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব তাঁকে চড় মেরেছেন।

তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আন্দোলনরত কোনো কর্মচারীকে চড় মারার ঘটনা ঘটেনি। এর আগে চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরের সামনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব, কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন ও রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সদস্যরা ফটক ভেঙে উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের মুক্ত করেন। কর্মচারী সমিতির সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে গতকাল তালা ভাঙলেও ওই সময় সেখানে পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপাচার্যের দপ্তরের সামনে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী বলেন, তাঁরা দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মরত ১৩৪ জন দীর্ঘদিন ধরে চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। এ জন্য তাঁরা একাধিকবার উপাচার্য বরাবর লিখিত স্মারকলিপি দিয়ে দাবি জানিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৪ মে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তাঁরা তাঁদের দাবির কথা জানান। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী সমিতিকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

গতকালের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘১৭ মে বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করলে কর্মচারী সমিতির সভাপতি আমাদের হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সভাপতি উত্তেজিত হয়ে বের হয়ে যান। তখন আমরা আতঙ্কিত হয়ে আমাদের নিরাপত্তার জন্য কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দিই। কিছু সময় পর কর্মচারী সমিতির সভাপতি তাঁর লোকজন নিয়ে কলাপসিবল গেটের তালা ভাঙার চেষ্টা চালান। তালা না ভাঙতে পেরে যন্ত্র দিয়ে কলাপসিবল গেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে চান। তবে এতে ব্যর্থ হয়ে পরে আরও লোকজন নিয়ে শাবল, হাতুড়ি ও মোটা রশি দিয়ে কলাপসিবল গেট ভেঙে ফেলা হয়। তখন আমরা উপাচার্যের কক্ষের সামনের লবিতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। উপাচার্য স্যার বেলা আড়াইটার সময় আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার কথাবার্তা ছাড়াই বের হয়ে যান। এ সময় উপাচার্য স্যার আমাকে (মোহাম্মদ আলী) চড় মারেন।’

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একজন উপাচার্য কীভাবে কর্মচারীর গায়ে হাত তোলেন, তা আমাদের কারও বোধগম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি তথা সরকারি সম্পত্তি কলাপসিবল গেট ভাঙা, এটা কোন ধরনের কাজ। এটা কে বা কার ইন্ধনে হয়েছে তা আমাদের কারও বোধগম্য নয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে চড় মারার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য স্যারের বিরুদ্ধে চড় মারার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। উপাচার্য স্যার যখন তাঁর কক্ষ থেকে বের হচ্ছিলেন তখন দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের মধ্য থেকে কেউ একজন মোবাইলে ভিডিও করছিলেন। স্যার তাঁকে ভিডিও ধারণ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু ওই কর্মচারী কোনোভাবেই নিষেধ শুনছিলেন না। স্যার তখন তাঁর (কর্মচারীর) মোবাইল সরিয়ে দেন।’

দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁদের (আন্দোলনরত কর্মচারী) সঙ্গে এমন কোনো আচরণ হয়নি। আমরা কেন তাঁদের হুমকি দিতে যাব? ২০ তারিখের ভর্তি পরীক্ষাকে বানচাল করার জন্য তাঁরা বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করছেন।’