রংপুরে খালাতো বোনের সঙ্গে প্রেমের কারণে ইজিবাইকচালক মোহাম্মদ আলীকে (১৭) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে শরীরের বিভিন্ন অংশ অ্যাসিডে ঝলসে দেওয়া হয়। এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তার খালু ও ওই মেয়ের বাবা মোক্তার হোসেন (৩৯)। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে মোক্তার নিজে ওই হত্যার ঘটনায় করা মামলার বাদী হন। পরে মোক্তার হোসেনসহ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মিঠাপুকুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন এবং একই উপজেলার আশরাফপুর এলাকার রোদোয়ান মিয়া ও ইসলাম মিয়া।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে সাতটায় রংপুরের হাজিরহাট উত্তম বারোঘরিয়া র্যাব-১৩-এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের উপ-অধিনায়ক এ এইচ এম ওমর ফারুক। এর আগের দিন গত রোববার দুপুরে রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কাটাবাড়ি জমিদারপাড়া এলাকার একটি মরিচখেত থেকে মোহাম্মদ আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আলী মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিল।
মোক্তার হোসেনের মালিকানাধীন একটি ইজিবাইক ভাড়ায় চালাত মোহাম্মদ আলী। সেই সুবাদে মোক্তারের এক মেয়ের সঙ্গে আলীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মোক্তার। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার বিকেলে আলীকে ইজিবাইকসহ কৌশলে ওই মরিচখেতে নিয়ে যান আরেক ইজিবাইকচালক রেদোয়ান মিয়া। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন মোক্তার।র্যাব কর্মকর্তা ওমর ফারুক
র্যাব কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, মোক্তার হোসেনের মালিকানাধীন একটি ইজিবাইক ভাড়ায় চালাত মোহাম্মদ আলী। সেই সুবাদে মোক্তারের এক মেয়ের সঙ্গে আলীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মোক্তার। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার বিকেলে আলীকে ইজিবাইকসহ কৌশলে ওই মরিচখেতে নিয়ে যান আরেক ইজিবাইকচালক রেদোয়ান মিয়া। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন মোক্তার। সেখানে যাওয়ার পর আলীর মাথায় রড দিয়ে আঘাত করেন মোক্তার। পরে অ্যাসিড ঢেলে মৃত্যু নিশ্চিত করেন রোদোয়ান। যাওয়ার আগে আলীর ইজিবাইক থেকে চারটি ব্যাটারি খুলে নিয়ে যান মোক্তার ও রোদেয়ান।
খবর পেয়ে গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে ওই মরিচখেত থেকে আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ওই রাতেই মোক্তার নিজে বাদী হয়ে ভাগনে মোহাম্মদ আলীকে হত্যার অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন। কিন্তু মামলায় তিনি কাউকে আসামি করেননি। ঘটনার পরপরই থানা-পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-১৩–এর একটি দল হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার মোহাম্মদ আলীর ভাই জীবিত থাকার পরও তার খালু মোক্তার হোসেন হত্যা মামলার বাদী হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমাদের খটকা লাগে। পরে র্যাবের ছায়া তদন্তে সম্ভাব্য হত্যাকারী হিসেবে রেদওয়ান মিয়ার নাম বেরিয়ে আসে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী মোক্তার হোসেন। পরে মোক্তারকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর মেয়ের সঙ্গে ভাগনে মোহাম্মদ আলীর প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ক্ষোভের বিষয়টি জানা যায়। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরেই পরিকল্পনা মোতাবেক আলীকে ওই স্থানে নিয়ে হত্যা করেন ওই ব্যক্তিরা।’
পুলিশ জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে ওই তিন আসামিকে রংপুরের আদালতে হাজির করা হবে।