জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়নে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তবে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য টানানো পোস্টারে মুজিবুল হক নিজেকে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত’ প্রার্থীর পাশাপাশি ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এক প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার সঙ্গে সমঝোতার কারণে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। এই আসনে দলের প্রার্থী ছিলেন করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুজিবুল হক। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়। এর পর থেকে এলাকায় মুজিবুল হকের পোস্টার টানানো হয়। যেখানে ‘আওয়ামী লীগ–সমর্থিত’ লেখা রয়েছে।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন—নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহফুজুল হক (ঈগল), মেজর (অব.) মো. নাসিমুল হক (কাঁচি), কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার গোলাম কবীর ভূঁইয়া (কেটলি) ও মো. রুবেল মিয়া (ট্রাক) প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উনি (মুজিবুল হক) সব সময় বলেছেন, ওনারা বিরোধী দল। তাহলে বিরোধী দল কীভাবে সরকারি দলের সমর্থিত হয়?মো. এরশাদ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক উপকমিটির সদস্য
জাপা প্রার্থীর পোস্টারের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কবীর ভূঁইয়া জানান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুজিবুল হক আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কথাটি পোস্টারে লিখে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে একক নির্বাচন করছে, তাদের প্রার্থীর সংখ্যা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি। এত বড় বড় কথা বলেন, আবার পোস্টারে কীভাবে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত লেখেন। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে তিনি গত বুধবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, সরকার সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও দলের ভোটাররা এটা মেনে নিতে পারছেন না। কারণ, গত ১৫ বছর নৌকার সমর্থন নিয়ে লাঙ্গল বিজয়ী হলেও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক নিজের ও জাতীয় পার্টির কিছু নেতা-কর্মী ছাড়া কারও কোনো কাজে আসেননি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এ আসনে জাতীয় পার্টির এই নেতার কারণে দলের নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত ও অবহেলিত। তাই এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না তাঁকে।
করিমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. এরশাদ উদ্দিন বলেন, ‘উনি (মুজিবুল হক) সব সময় বলেছেন, ওনারা বিরোধী দল। তাহলে বিরোধী দল কীভাবে সরকারি দলের সমর্থিত হয়? উনি পোস্টারে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কথা লিখতে পারেন না।’
একই মত নৌকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা নাসিরুল ইসলাম খানের। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় মুজিবুল হককে এ আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাই বলে সমর্থন দেওয়া হয়নি। কাজেই পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ–সমর্থিত’ লেখাটা অন্যায় হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে মুজিবুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি, তবে করিমগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিয়ে ছাড় দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে, তাই আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কথাটা লেখা দোষের কিছু নয়। এটা লেখা যায়। গত নির্বাচনেও মুজিবুল হকের পোস্টারে একই কথা লেখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুজিবুল হকের পোস্টারের ব্যাপারে একজন প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। যেহেতু এটা দলীয় বিষয়, তাই এ বিষয়ে করার কিছু নেই। অভিযোগকারী ব্যক্তিকে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত আবেদন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।