টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির সতর্ক পাহারা
টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির সতর্ক পাহারা

মিয়ানমার সংঘাত

নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে আশ্রয় নিলেন বিজিপির আরও ৪০ সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নাফ নদী অতিক্রম করে আজ শনিবার তিন দফায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৪০ জন সদস্য টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন। আরও কিছু সদস্য পালিয়ে আসার জন্য সেখানকার নাফ নদীতে অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে।

রাখাইন রাজ্যে টানা সাত দিন গোলাগুলি বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে মংডু টাউনশিপের উত্তরে কাওয়ারবিল এলাকাতে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ওপারের বিস্ফোরণের শব্দ টেকনাফ সীমান্তের মানুষ শুনতে পাচ্ছে। আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত ওপারে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণের শব্দ এপারে ভেসে আসছিল।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে টানা আড়াই মাস ধরে সংঘাত লড়াই চলছে। গতকাল শুক্রবার রাতে আরকান আর্মির সদস্যরা বিজিপির ১ নম্বর সেক্টরটি দখলে নিয়ে নেন। এ সময় হতাহতের ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে ওই সেক্টরের বিজিপি সদস্যদের উল্লেখযোগ্য অংশ মংডু টাউনশিপের পূর্ব দিকের কালাদান পাহাড়ে আত্মগোপন করেন। কিছু সদস্য নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আশ্রয় নেন। কাওয়ারবিলের বিপরীতে নাফ নদীর এপারে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া ও খোন্দকারপাড়ার অবস্থান।

সীমান্তবর্তী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাফ নদী অতিক্রম করে গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার সাবরাং সীমান্তে আশ্রয় নেন বিজিপির ১৪ সদস্য। দ্বিতীয় দফায় আজ সকাল আটটার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া সীমান্ত দিয়ে আশ্রয় নেন বিজিপির আরও ২২ সদস্য। তৃতীয় দফায় দুপুর ১২টার দিকে নাজিরপাড়া সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন বিজিপির আরও ৪ সদস্য। সব মিলিয়ে বিজিপির ৪০ জন সদস্যকে নিরস্ত্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করলেও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাজিরপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আজ সকালের দিকে মিয়ানমারের কিছু লোকজন নৌকা নিয়ে নাফ নদীর নাজিরপাড়ায় আসেন। তাঁদের কয়েকজনের হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। এরপর তাঁরা বেড়িবাঁধের ওপর উঠে বসে পড়েন। কয়েকজনের পরনে উর্দি দেখে সন্দেহ হয় তাঁরা বিজিপির সদস্য।

মুহূর্তেই সেখানে হাজির হন বিজিবির সদস্যরা। তারপর বিজিপি সদস্যদের ঘিরে ফেলেন এবং অস্ত্রশস্ত্র নিজেদের হেফাজতে নিয়ে রাখেন। দুপুরে গাড়িতে বিজিপির সদস্যদের টেকনাফ শহরের দিকে নেওয়া হয়।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের (নাজিরপাড়া) ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, টানা ছয়–সাত দিন রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি বন্ধ ছিল। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেখানে নতুন করে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ শুরু হয়। আরাকান আর্মি সেখানকার কাওয়ারবিলের বিজিপির একটি সেক্টর দখল করে নিয়েছে বলে খবর রটেছে। এখন ওই সেক্টরের বিজিপির সদস্যদের কিছু সদস্য নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৩ দফায় ৪০ জন এসেছেন বলে জানা গেছে।

৪০ বিজিপি সদস্য টেকনাফে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, নাফ নদী অতিক্রম করে বিজিপির সদস্যদের টেকনাফে আশ্রয় নেওয়ার খবরটি তাঁকে নিশ্চিত করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজন। তবে ৪০ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিজিবি ও কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি কল রিসিভ করেননি। তাঁর সরকারি মুঠোফোন নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মিলেনি।

নাফ নদীতে টহলে থাকা কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কর্মকর্তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। স্টেশন কর্মকর্তার সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা আড়াই মাসের চলমান সংঘাতে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব পাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১৪টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে কয়েক দফায় ৬১৮ জন মিয়ানমার সেনা, বিজিবি এবং ইমিগ্রেশন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে ২৮৮ জনকে (বিজিপি-২৬১ ও সেনাসদস্য ২৩ এবং ৪ জন ইমিগ্রেশন সদস্য) গত ২৫ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় ৩৩০ জন সেনা ও বিজিপি সদস্যকে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাহাজে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। মিয়ানমারের ৬১৮ জনকে রাখা হয়েছিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির হেফাজতে, সেখানকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।