একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মাতম থামছে না স্বজনদের। রোববার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের আরাজি গ্রামে
একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মাতম থামছে না স্বজনদের। রোববার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের আরাজি গ্রামে

নাতি-নাতনিসহ মেয়েকে মেরে ফেলেছে, না আত্মহত্যা বুঝতে পারছেন না বাবা

ইসলাম গোলদারের এক মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ডলি বেগম (৩২)। নাতি-নাতনিসহ সেই মেয়েকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় ইসলাম গোলদার ও তাঁর স্ত্রী শেফালি বেগম। তাঁদের কান্না থামছে না। আজ রোববার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের আরাজি গ্রামে ইসলাম গোলদারের বাড়ি গিয়ে স্বজনদের মাতম করতে দেখা যায়।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ডলি বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় পাশের গুটুদিয়া ইউনিয়নের কোমলপুর গ্রামের আবদুল মান্নান সরদারের। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মান্নান সরদারের ঘর থেকে তাঁর স্ত্রী ডলি বেগমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। আর ঘরের মধ্যে খাটের ওপর পড়ে ছিল শিশু ফাতেমা খাতুন ও ওমরের লাশ। ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। স্থানীয় লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ফাতেমা ও ওমরের নিথর দেহ নিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ ডলি বেগম ও দুই শিশুর লাশ নিজেদের হেফাজতে নেয়। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে লাশ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ডলি বেগমের বাবা ইসলাম গোলদার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই সময় মেয়ের মন খারাপ ছিল। তিনি বলেন, ‘শাশুড়ির সঙ্গে ডলির মাঝেমধ্যে ঝগড়া হতো। পরে তার স্বামী বাড়ি এসে ডলিকে নির্যাতন করত। নাতি-নাতনিসহ মেয়েকে মেরে ফেলেছে, না আত্মহত্যা, এখনো বুঝতে পারতেছি না।’ তবে তিনি জামাতা ও মেয়ের শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

ডলির স্বামী আবদুল মান্নান সরদারের দাবি, গত তিন মাসের মধ্যে তাঁদের মধ্যে কোনো পারিবারিক কলহ হয়নি। এমন ঘটনা কেন ঘটল, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

আবদুল মান্নান সরদার গতকাল দাবি করেছিলেন, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নাশতা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডুমুরিয়া সদরে যান। বেলা একটার দিকে বাড়িতে ফেরেন। ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখে স্ত্রীর নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে কাঁচি দিয়ে ঘরের খিল বাইরে থেকে খুলে ভেতরে ঢোকেন। ঘরে ঢুকে দুই সন্তানের নিথর দেহ বিছানার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। আর ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় কাপড় প্যাঁচানো তাঁর স্ত্রীর লাশ ঝুলছিল। তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা আজ প্রথম আলোকে বলেন, লাশ তিনটির সুরতহাল করে আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন ডলি বেগম।