আবুল কালাম আজাদ ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল
আবুল কালাম আজাদ ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল

কুমিল্লা-৪ আসন

সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যানের নামই বেশি চাউর হচ্ছে

পৌষের সকাল। আশপাশের গ্রাম থেকে জড়ো হন নানা শ্রেণির মানুষ। তাঁদের বেশির ভাগই নারী। বেলা ১১টার আগেই দেবীদ্বারের ধামতী গ্রামের মসজিদের পাশের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ। ঈগল ধ্বনিতে মুখর পুরো মাঠ। কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) মো. আবুল কালাম আজাদের নির্বাচনী সভাকে ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

নির্বাচনী সভায় আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেবীদ্বারে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। মাদক কেনাবেচা হয়। মাদক, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে উন্নয়নবঞ্চিত দেবীদ্বারবাসী রায় দেবেন।

এদিকে বেলা তিনটার দিকে বরকামতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের নির্বাচনী সভায়ও লোকে লোকারণ্য। ছোট মাঠ পেরিয়ে সড়ক ও বাজারে লোকজন অবস্থান করেন। সভায়ও নৌকার পক্ষে স্লোগান ওঠে। সভায় রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, ‘নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। দেবীদ্বারবাসী উন্নয়নের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’

নির্বাচনী সভায় কথা বলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। মঙ্গলবার বরকামতা এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে

রাজী মোহাম্মদ ফখরুল হলফনামায় অতীতের প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই অর্জন হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থায় ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণে ৯০ ভাগ কাজ হয়েছে। স্বাস্থ্য ও বিদ্যুতায়নে শতভাগ অর্জনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এ আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১২। তাঁদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল দুজনই দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

পদ্মকোট এলাকার ভোটার সালাম মিয়া (৫২) বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নৌকার পক্ষে জনসমর্থন বেশি।’

সরেজমিন গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দেবীদ্বার উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম ঘুরে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার ও নির্বাচনী অস্থায়ী কার্যালয় দেখা গেছে। অন্য প্রার্থীদের পোস্টার অপেক্ষাকৃত কম। তাঁদের বেশির ভাগই প্রচারে নেই। ভোটারদের কাছে তাঁদের পরিচিতিও কম। ভোটারদের মুখে মুখে দুই প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও মো. আবুল কালাম আজাদের নামই বেশি চাউর হচ্ছে।

রাজী মোহাম্মদ ফখরুল কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি ২০০৯ সালে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে আছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী, দেবীদ্বার পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা।

আবুল কালাম আজাদ ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাঁর পক্ষে দেবীদ্বারের ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইকবাল হোসেন ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা আছেন।

নির্বাচনী সভায় কথা বলেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। মঙ্গলবার দেবীদ্বারের ধামতী গ্রামে

কুড়াখাল গ্রামের ভোটার আমেনা বেগম (৫৮) বলেন, ‘দক্ষিণ দেবীদ্বারের ছেলে আজাদ প্রার্থী হয়েছেন। তাঁকে ভোট দেব।’

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইকবাল হোসেন বলেন, ‘অত্যাচার, লুটপাট থেকে বাঁচার জন্য আবুল কালাম আজাদকে ঈগল মার্কায় ভোট দিন। দেশে এখন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র লীগ আছে। স্বতন্ত্র লীগই জিতবে।’

এই আসনের নির্বাচনের মাঠে অন্য প্রার্থীরা হলেন—জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ইউসুফ (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ শফিউল বাদশা (একতারা), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. আজহারুল করিম (ফুলের মালা), গণফ্রন্টের মো. আলা উদ্দিন (মাছ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইকরাম হোসেন (আম), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. নাছির আল মামুন (হাতঘড়ি), তৃণমূল বিএনপির মো. মাহবুবুল আলম (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের রফিকুল্লাহ সাদী (মিনার), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) শাহেরা বেগম (টেলিভিশন) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের শিমুল হোসেন (চেয়ার প্রতীক)। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৩। ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত।