জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নবীন চোখে গণ-অভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আসিফ মাহমুদ। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নবীন চোখে গণ-অভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আসিফ মাহমুদ। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বললে দলগুলো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে: আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে; সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হওয়া উচিত।’

সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘নবীন চোখে গণ-অভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আসিফ মাহমুদ এ কথাগুলো বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আয়োজিত সভার শুরুতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন। এরপর গণ-অভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করা হয়।

গণ-অভ্যুত্থানের আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আসিফ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। ইতিপূর্বে বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য যেসব খরচ হয়েছে, তা সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।’ তিনি আরও জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আহত ব্যক্তিদের দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পাসপোর্ট না থাকা ও অনেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিছু জটিলতা রয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা সরকারের প্রথম অগ্রাধিকারের মধ্যে ছিল।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই গণ–অভ্যুত্থান আংশিক সফল হয়েছে। কারণ, আমাদের এক দফা দাবির মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। কিন্তু এখনো সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করা সম্ভব হয়নি।’

আলোচনা সভায় সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট সাইয়েদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই গণ–অভ্যুত্থানের পরে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট, প্রত্যেকেই এখন নিজেদের নাগরিক ভাবে। সংবিধান সংস্কার কমিটিতে আমি একটা কথা বলেছি, বাংলাদেশের অফিশিয়াল নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ থাকতে পারে না। কারণ, যে মুহূর্তে এই শব্দের ভেতরে প্রজা থাকবে, তখনই আমাদের মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করে, কেউ না কেউ বোধ হয় রাজা আছে। নতুন বাংলাদেশ আমি কোনো রাজা দেখতে চাই না, আমি দেখতে চাই এই দেশের মালিক এই দেশের জনগণ।’

আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, ‘আমাদের অধিকারের প্রয়োজনে আমাদের সবাইকে জাগ্রত থাকতে হবে। আমাদের অধিকার অন্য কেউ আদায় করে দেবে না। আমরা একটা সুষ্ঠু ভোট চাই, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যেখানে জবাবদিহি থাকবে। রাষ্ট্র যাঁরা চালাবেন তাঁরা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য থাকবেন। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যেখানে আমরা বিচার পাব। আমাদের ধর্ম আলাদা হতে পারে, জাতিগত পরিচয় আলাদা হতে পারে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারে; কিন্তু এই মৌলিক প্রশ্নগুলোতে আমরা সবাই এক।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ জামালউদ্দিন, অধ্যাপক মো. লুৎফুল এলাহী, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ প্রমুখ। আলোচনা শেষে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় গান পরিবেশনা করেন র‍্যাপার হান্নান।