বর ও কনের বাড়ির দূরত্ব মাত্র সাত কিলোমিটার। অথচ এইটুকু পথ পাড়ি দিয়ে কনেকে বাবার বাড়ি থেকে বরের বাড়ি, আবার বরের বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি আনা–নেওয়া করা হয়েছে হেলিকপ্টারে। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের কাজী কসবা ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাইচাইল গ্রামের শত শত মানুষ।
কনের নাম মরিয়ম আক্তার সুস্মিতা। তিনি সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ফুলন কাজীর মেয়ে। বর কাইচাইল গ্রামের মোশাররফ হাওলাদারের ছেলে সাব্বির হোসেন। সাব্বির একজন প্রবাসী। তিনি ফিলিপাইনে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেন। শুক্র ও শনিবার দুই দিন হেলিকপ্টারে আস-যাওয়ার ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে তিন লাখ টাকা। এতেও খুশি পরিবার দুটি।
বর ও কনে দুই পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরের মায়ের ইচ্ছা ছিল, তাঁর ছেলেকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করাবেন। বউকে আনবেন আকাশপথে। যেন বিয়ের কথা মানুষের মুখে মুখে থাকে। কনের ভাইয়েরও ইচ্ছা ছিল, তাঁর বোনকে যে ঘরে বিয়ে দেবেন, তাঁরা যেন হেলিকপ্টারে করে মরিয়মকে নিতে আসেন। আবার বোনকে যখন বউভাত অনুষ্ঠান শেষে আবারও বাবার বাড়িতে আনা হবে, তখনো যেন হেলিকপ্টারে করেই আনা হয়। দুই পরিবারের চাওয়া এক জায়গায় মিলে যাওয়ায় বিয়ের দিন ও বউভাতে হেলিকপ্টারে করে নবদম্পতিকে আনা-নেওয়া করা হয়। হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা দেখতে বর ও কনের এলাকায় উৎসুক মানুষের ভিড় পড়ে যায়।
টাকাপয়সা জীবনে অনেক আসবে-যাবে। আমার ইচ্ছা ছিল আমার বড় ছেলেকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করাব। আমি সফলভাবে আমার ছেলেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বিয়ে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমি বর-কনের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।শাহিদা বেগম, বরের মা
গতকাল মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের কাজী কসবা গ্রামে কনের বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। আজ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাইচাইল গ্রামে সাব্বিরদের বাড়িতে হয় বউভাতের অনুষ্ঠান। বউভাত অনুষ্ঠানে ছিলেন ২ হাজার ২০০ মানুষের আয়োজন। বেলা ১টা থেকে অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। কনের বাড়ি থেকে মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিতে আসেন দুই শতাধিক মেহমান। খাওয়াদাওয়া শেষে দুই পক্ষের মেহমানরা অপেক্ষায় ছিলেন হেলিকপ্টার দেখার।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কাইচাইল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামে হেলিকপ্টার। ওই হেলিকপ্টারে চড়ে বোনকে নিতে আসেন কনে মরিয়মের ভাই কাজী আবির, আবিরের স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন। হেলিকপ্টারটি মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে ওই স্থানে শত শত লোকের ভিড় জমে যায়। উৎসুক মানুষ ছবি ও সেলফি তোলেন, মুহূর্তটি ভিডিও করে রাখেন।
বউভাতে আসা আরিফ মোল্লা নামের এক অতিথি বলেন, ‘সচরাচর মাইক্রো অথবা ট্যাক্সিতে করেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। হেলিকপ্টারে করে আমার এর আগে এমন বিয়ে দেখা হয়নি। শনিবার বউভাতে এসে দেখে গেলাম।’
কাইচাইল এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে বাড়ি থেকে এসেছি। নতুন বউকে আগে দেখা হয়নি, বউ তার বাবার বাড়ি যাবে। বউ ও হেলিকপ্টার একসঙ্গে দুটি দেখে নিয়েছি।’ স্থানীয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত বলে, ‘আমি এর আগে এত কাছ থেকে কখনো হেলিকপ্টার দেখিনি। আজ আমাদের বাড়ির পাশের মাঠে হেলিকপ্টার আসায় আমরা দেখতে আসছি। খুব ভালো লাগছে।’
কনের বড় ভাই আবির কাজী বলেন, ‘আগে থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল, আমার ছোট বোনকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে দিব। আমাদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। শুক্রবার আকাশপথে বোন স্বামীর বাড়ি এসেছিল। আজ শনিবার আবার আকাশপথে বোন, ভগ্নিপতি আমাদের বাড়িতে এসেছে। হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে হওয়ায় আমার বোনের বিয়ে সবার মুখে মুখে।’
বর সাব্বির হোসেনের মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘টাকাপয়সা জীবনে অনেক আসবে-যাবে। আমার ইচ্ছা ছিল আমার বড় ছেলেকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করাব। আমি সফলভাবে আমার ছেলেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বিয়ে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমি বর-কনের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’