পিরোজপুর জেলায় ৯৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এর মধ্যে ১৮৪টির ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। চালের টিনেও জং ধরে অসংখ্য ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে টিনের ছিদ্র দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। স্বাভাবিক সময়ে পড়ে রোদ। এতে পাঠদানের সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ পোহায়।
এই চিত্র পিরোজপুর সদর উপজেলার ৫ নম্বর জুজখোলা বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এই বিদ্যালয়সসহ জেলার ৭ উপজেলার ১৮৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শিক্ষকেরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলায় ৯৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮৪টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ। এর মধ্যে জেলার পিরোজপুর সদর উপজেলায় ১৮টি, ভান্ডারিয়া উপজেলায় ৬৫টি, মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৪৩টি, নেছারাবাদ উপজেলায় ২৪টি, নাজিরপুর উপজেলায় ২০টি, ইন্দুরকানি উপজেলায় ১০টি ও কাউখালী উপজেলায় ৪টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভবনগুলোর স্তম্ভে (পিলার) ফাটল ধরেছে। বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে নব্বই দশকে এসব বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। কিছু ভবন ২০০০ সালের পর তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবন ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পিরোজপুর সদর উপজেলার জুজখোলা বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। টিনের চালে ছিদ্র হয়ে গেছে। দরজা জানালা ভেঙে গেছে। টিনের চাল থাকায় রোদে গরমের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার ১৫৩ নম্বর দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া পঞ্চগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একটি ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিমে ফাটল ধরেছে। সেখানে ঝুঁকি নিয়ে দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া পঞ্চগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাকসুদা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের একটি ভবনে পাঠদানের স্থান সংকুলান না হওয়ায় পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে।
জুজখোলা বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা খানম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনটি ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে। আমাদের বিদ্যালয়ের ছয়টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন, রয়েছে চারটি। বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে টিন ও কাঠ দিয়ে দুটি কক্ষ তৈরি করে সেখানে পাঠদান করতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পাকা ভবনের চালের টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। কাঁচা হওয়ায় বর্ষাকালে স্যাঁতসেতে হয়ে যায়। আমাদের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য একটি নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুজখোলা বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পাঠদানের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা ওই বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এই বিষয়ে পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, ‘জেলার সব ঝুঁকিপূর্ণ পাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়গুলোর জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। ’