হাসপাতালের বিছানায় ভাই-বোন, জানে না মা-বাবা বেঁচে নেই

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ৪ নম্বর শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন সোহান (১৯)। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর। মাঝেমধ্যে ইশারায় কথা বলছেন। ৩০ নম্বর শয্যায় আছেন তাঁর বড় বোন শাহীনা (২৩)। ছটফট করছেন তিনিও। আগুনের তাপ আর ধোঁয়ায় পুড়েছে দুজনের শ্বাসনালি।

আগুন থেকে বাঁচতে মা-বাবাসহ আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘরের শৌচাগারে। সঙ্গে প্রতিবেশী মো. ফয়সালও ছিলেন। সেখান থেকে উদ্ধারের পর হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঠাঁই হয় এই তিনজনের। কিন্তু সোহান ও শাহীনা এখনো জানে না তাঁদের মা-বাবা না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। সোহানদের বাবা মো. ইলিয়াছ (৫০) ও মা পারভিন আকতারের (৪৫) মরদেহ রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে।

আজ সোমবার সকালে নগরের বলুয়ার দিঘির পাড়ে বসতঘরে আগুন লাগার পর ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তাঁরা হতাহত হন। স্বজনেরা জানান, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বলুয়ার দিঘির পশ্চিম পাড়ের জাফর সওদাগরের কলোনিতে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। নিহত ইলিয়াছ ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। ছেলে সোহানও একই কাজ করেন। ইলিয়াছের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছোট মেয়ে তাহসিন বাসায় ছিলেন না। তিনি কয়েক দিন আগে কর্ণফুলী থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মা–বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাহসিন হাসপাতালে চলে আসেন। পরিবারের এমন বিপর্যয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাহসিন।

তাহসিন বলেন, পাঁচ মাস আগে বলুয়ার দিঘির দক্ষিণ পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ের এই সেমিপাকা বাসায় আসেন তাঁরা। ভাড়া ৬ হাজার ৩০০ টাকা। মায়ের সঙ্গে দুই দিন আগে ফোনে তাঁর শেষ কথা হয়। আজ সকালে তিনি আগুন লাগার খবর পান। চিকিৎসাধীন ভাই–বোন এখনো মা–বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানেন না বলে জানান তাহসিন।

তাহসিনকে আগলে বসে আছেন তাঁর ফুফু পারভিন বেগম। পারভিনের বাসাও তাহসিনদের বাসার পাশে। সকালে আগুন লাগার পর তাঁরা ওই বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পারভিন বলেন, ‘যখন আগুন লাগে, সবাই ঘুমে ছিল। আগুনের জন্য ভেতরে ঢোকা যাচ্ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়ে একটা শৌচাগার থেকে পাঁচজনকে বের করে। ভাই আর ভাবি মারা গেছেন। আমার ভাই পো আর ভাইঝির অবস্থাও ভালো নয়।’

সোহানের পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন মো. ফয়সাল বালতি তৈরির কারখানায় চাকরি করেন। তিনি সোহানের বন্ধু। পাশের বাসায় থাকেন। হাসপাতালে ফয়সালকে শুশ্রূষা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁর মা রুশনা বেগম। রুশনা বলেন, ‘আগুন দেখে ফয়সাল চিৎকার করে তাদের বের হয়ে আসতে বলছিল। পরে উদ্ধারের জন্য সে বাসায় ঢুকে পড়ে। তখন আগুন আরও ছড়িয়ে যায়। তারা সবাই তখন শৌচাগারে আশ্রয় নেয়। এখন ছেলের অবস্থা খুব খারাপ। শ্বাস নিতে পারছে না।’

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. এস খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আহত তিনজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। গরম ধোঁয়ায় শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) সেবা দরকার। আইসিইউতে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’