কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় পর্যটকবাহী নৌকাডুবির ১৪ ঘণ্টা পর নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে ডুবুরি দল। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের নেতৃত্বে ডুবুরি দল আজ শনিবার সকাল সোয়া ৮টা থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা অপর একটি ডুবুরি দল উদ্ধারকাজে অংশ নেয়।
তবে আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিখোঁজ কারও সন্ধান মেলেনি। মেঘনা নদীর তীরে নিখোঁজদের অপেক্ষায় আছেন স্বজনেরা। কেউ কেউ করছেন আহাজারি। কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক এনামুল হক বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ভৈরবে মেঘনা নদীর পাশাপাশি থাকা তিনটি সেতু এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পর্যটকবাহী একটি নৌকা ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ছয়জন নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়। তবে আজ শনিবার সকালে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে আটজন নিখোঁজের তথ্য পাওয়া গেছে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ভৈরব হাইওয়ে থানার কনস্টেবল সোহেল রানা। তিনি স্ত্রী, দুই সন্তান ও এক ভাগনিকে নিয়ে ওই নৌকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। নৌকাডুবির পর ভাগনি মারিয়া ভূঁইয়া বেঁচে ফিরতে পারলেও নিখোঁজ আছেন সোহেল রানা, তাঁর স্ত্রী মৌসুমী বেগম, তাঁদের দুই সন্তান ইভা বেগম ও রাইসুল ইসলাম।
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামের কলেজপড়ুয়া দুই বান্ধবী সুবর্ণা বেগম ও আনিকা বেগম ওই নৌকার আরোহী ছিলেন। সুবর্ণা তীরে ফিরতে পেরেছেন। তবে আনিকা এখনো নিখোঁজ। সুবর্ণা বেগম বললেন, তাঁদের ঘোরা শেষে ফিরে আসার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাল্কহেডটি ধাক্কা দেওয়ার পর তাঁরা দুজন ছিটকে নদীতে পড়ে যান।
আজ সকালে মেঘনা নদীর ভৈরব প্রান্তের সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড়। স্বজনেরা নিখোঁজদের সন্ধানে অপেক্ষা করছেন। ডুবুরি দল মাঝনদীতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
আনিকার চাচাতো ভাই আলমগীর মিয়া বললেন, মেঘনা নদীতে ঘুরতে আসার কথা বলে গতকাল বেলা তিনটার দিকে আনিকা ঘর থেকে বের হয়ে যান। এখনো তাঁর কোনো হদিস পাওয়া গেল না।
কনস্টেবল সোহেল রানাসহ তাঁর পরিবারের চারজন নিখোঁজের ঘটনায় দিশাহারা স্বজনেরা। সোহেল রানার বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ গ্রামে। তাঁর ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ভৈরব হাইওয়ে থানায় সাত মাস আগে যোগ দেন সোহেল রানা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভৈরবেই থাকতেন। রাতে দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাঁরা ভৈরবে আসেন।
নৌকাডুবির ঘটনায় গতকাল এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। আজ তাঁর পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম সুবর্ণা আক্তার (২০)। তিনি পৌর শহরের কমলপুর এলাকার স্বপন মিয়ার মেয়ে। ভৈরব নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য সুবর্ণার লাশ কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনা নদীর ভৈরব এলাকায় পাশাপাশি দুটি রেল ও একটি সড়কসেতু আছে। তিনটি সেতু ঘিরে ভৈরব প্রান্তে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে মেঘনা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে একটি নৌকায় ১২ থেকে ১৫ জন দর্শনার্থী যাত্রা করেন। মাঝনদীতে যাওয়ার পর কয়েকজন যাত্রী মাঝিকে ছবি তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন তিনি বইঠা ছেড়ে ছবি তুলে দিচ্ছিলেন। এ সময় নৌকাটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। তখন বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবাহী একটি বাল্কহেড নৌকাটি ধাক্কা দিলে সেটি উল্টে যায়।