কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সাত দিন আগে লাখো পর্যটকের সমাগম থাকলেও পবিত্র রোজার মাসে অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন স্থানটি। এ কারণে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজ খালি পড়ে আছে। রোজার প্রথম দিন থেকে শহরের সাত শতাধিক রেস্তোরাঁও বন্ধ। এতে ভ্রমণে আসা কয়েক হাজার পর্যটককে খাবার নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, দুই কিলোমিটার লম্বা এই সৈকতে মাত্র তিনজন বালুচরে হাঁটছেন। সৈকতজুড়ে অন্তত ৫০০টি কিটকট (চেয়ার-ছাতা) বসানো হলেও সব কটি খালি পড়ে আছে। সৈকতে নামার মুখের দোকানপাটও বন্ধ। পর্যটকদের ছবি তুলে দেওয়ার ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীরা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে লোকজনের অপেক্ষায় আছেন।
সৈকতের সুগন্ধা, সিগ্যাল ও লাবণী পয়েন্টেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। পুরো তিন কিলোমিটার সৈকতে শতাধিক মানুষকে কিটকটে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা গেছে। তবে গরমের কারণে তাঁদের খুব বেশি ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়নি।
সমুদ্রে গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, সাত-আট দিন আগে সুগন্ধা পয়েন্টে লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছিল। এখন সারা দিনে সমুদ্রে গোসলে নামছেন মাত্র দু-তিন হাজার। পর্যটক না থাকায় সৈকতকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে।
সব কটি হোটেল, রেস্তোরাঁয় সংস্কারের কাজ চালানো হচ্ছে। এগুলোর ৬০ শতাংশ কর্মচারীকে ঈদের অগ্রিম বেতন-বোনাস দিয়ে বাধ্যতামূলক এক মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।আবুল কাশেম সিকদার, সভাপতি, কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি
রোজার প্রথম দিন থেকে সৈকত ও শহর এলাকার পাঁচ শতাধিক হোটেল খালি পড়ে আছে জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, গতকাল হোটেলগুলোয় অতিথি ছিলেন পাঁচ হাজারের মতো। আজ সকালে চলে গেছেন এক হাজার। কয়েক দিন পর আরও কমে যাবে। রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের টানা ৭ থেকে ৮ দিনের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামবে, তখন ব্যবসা-বাণিজ্যও চাঙা হবে।
আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত সৈকতের পাঁচ তারকা হোটেল সিগ্যাল, ওশান প্যারাডাইস, সায়মান বিচ রিসোর্ট, হোটেল কক্স টুডে, হোটেল কল্লোল, মারমেইড বিচ রিসোর্টসহ কলাতলী এলাকার অন্তত ৪০টি হোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেগুলোর ৯৫ শতাংশ কক্ষ খালি পড়ে আছে। কোনো কোনোটি পুরোপুরি খালি। এর মধ্যে কয়েকটি হোটেলের মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
হোটেল সিগ্যালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী বলেন, রোজার মাসে অধিকাংশ কক্ষ খালি থাকে। হোটেলে মোট ১৭৯টি কক্ষের মধ্যে ৮৭ শতাংশ খালি আছে। কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
পর্যটক না থাকলেও পাঁচ শতাধিক হোটেল-গেস্টহাউস বন্ধ করা হয়নি জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সব কটি হোটেল, রেস্তোরাঁয় সংস্কারের কাজ চালানো হচ্ছে। এগুলোর ৬০ শতাংশ কর্মচারীকে ঈদের অগ্রিম বেতন-বোনাস দিয়ে বাধ্যতামূলক এক মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এখন হোটেল গেস্টহাউসগুলোয় চার থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক আছেন।
পুরো রোজার মাসে পর্যটক টানতে হোটেল-গেস্টহাউস–রিসোর্টগুলোয় কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান আবুল কাশেম সিকদার। তিনি আরও বলেন, সে ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকার একটি কক্ষের ভাড়া পড়ছে ৪০০ টাকা। হোটেলগুলোয় দৈনিক ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার জন।
দেখা গেছে, কয়েকটি হোটেল-গেস্টহাউস-কটেজে রং করা ও সংস্কার কাজের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপনের কাজ চালানো হচ্ছে। কক্সবাজার ফায়ার স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক দোলন আচার্য বলেন, শহরের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় অগ্নিনিরাপত্তার পরিকল্পনা নেই। অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারও থাকে অপর্যাপ্ত। এলপি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয় যত্রতত্র। পানির রিজার্ভারে পর্যাপ্ত পানি রাখা হয় না। এখন এসব স্থাপন ও সংস্কারের কাজ চলছে।
কক্সবাজার শহরে রেস্তোরাঁ আছে সাত শতাধিক। এর বাইরে সৈকত এলাকায় ভাজা মাছসহ খাবার বিক্রির ভ্যানগাড়ির দোকান আছে প্রায় ৩০০টি। রোজা উপলক্ষে সব কটি দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সৈকত ভ্রমণে আসেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী দীপক সাহা (৪৭)। আজ দুপুর ১২টার দিকে তিনি শহরের সুগন্ধা সৈকত এলাকায় খাবারের সন্ধান করছিলেন। কিন্তু কোনো রেস্তোরাঁ খোলা পাননি। দীপক সাহা বলেন, নির্জন পরিবেশে সমুদ্র উপভোগ্য হলেও খাবার নিয়ে বেশ দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কলাতলীর যে হোটেলে তাঁরা উঠেছেন, সেখানকার রেস্তোরাঁও বন্ধ। আশপাশের কোথাও রেস্তোরাঁ খোলা নেই। ফলে শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হচ্ছে।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারের রোজাতেও সব রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেগুলোর কর্মচারীদের এক মাসের বেতন-বোনাস অগ্রিম দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পাঁচ থেকে ছয়টি হোটেল খোলা রাখা রয়েছে। ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন থেকে খোলা হবে শহরের সব রেস্তোরাঁ।