কুষ্টিয়ায় এক মতবিনিময় সভায় জেলার চালকলমালিকদের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ধানের দাম কারা বেশি চাচ্ছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা আমাকে দেন। যাঁরা দাম বেশি চাচ্ছেন, এ সভাতে বসে যদি তাঁদের হাতে হাতকড়া পরাতে না পারি, তাহলে আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব। আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ দিলাম।’ এ সময় চালকলমালিকেরা চুপ হয়ে যান।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে এ সভা করা হয়। জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন।
মন্ত্রী সভায় উপস্থিত চালকলমালিকদের বলেন, ‘আপনারা প্রতিযোগিতা করে ধান কেনা বন্ধ করেন। দেখবেন, ধানের দাম ব্যবসায়ীরা কমিয়ে দেবেন। ধান তো ভোক্তারা কেনে না। তখন চালের দামও নিম্নমুখী হয়ে যাবে।’
এর আগে খাদ্যমন্ত্রী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার পাঁচটি অটো রাইস মিল পরিদর্শনে যান। খাদ্যমন্ত্রী প্রথমে দেশ অ্যাগ্রো লিমিটেডে যান। তিনি মিলমালিক আবদুল খালেককে সঙ্গে নিয়ে গুদাম ঘুরে দেখেন। আবদুল খালেকের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘দুই বছর আগে আপনার মিলে এসেছিলাম। আবারও আসলাম’। তখন খালেক বলেন, ‘জানি স্যার, সেই ভয়ও আছে। আপনি যা বলবেন তাই মেনে নেব।’
এরপর মন্ত্রী সুবর্ণা অটো রাইস মিলে যান। সেখানে লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে ১৫০ টন গম মজুত রাখার দায়ে মালিক জিন্নাহ আলমকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। ওই গমের গুদাম সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া আরেক মিলে গুদাম ভাড়া নিয়ে ধান মজুত করায় ওই গুদাম সিলগালা করে দেন। পাশেই স্বর্ণা অটো রাইস মিলে গিয়ে ধানের প্রচুর মজুত দেখতে পান মন্ত্রী। মজুতের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এরপর তিনি রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডে যান। সেখানে মালিক আবদুর রশিদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরিদর্শনের সময় মন্ত্রী কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনকে ভর্ৎসনা করেন। তিনি খাদ্য নিয়ন্ত্রকে বলেন, ‘এসব অনিয়ম কেন এত দিন চোখে পড়েনি। তোমার কাজ আমাকে এসে করতে হচ্ছে।’
পরে বেলা সাড়ে তিনটায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মতবিনিময় সভা করেন মন্ত্রী। বেলা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টা চলে এ সভা। সভায় মিলমালিকদের উদ্দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, চালের দাম বাড়া কাম্য নয়। দেশে খাদ্যঘাটতি নেই। সরবরাহ রয়েছে প্রচুর। তারপরও কী এমন হলো, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে হঠাৎ দাম দুই থেকে সাত টাকা প্রতি কেজিতে বেড়ে গেল?
সভায় দেশ অ্যাগ্রো রাইস মিলের মালিক আবদুল খালেক বলেন, ‘সিন্ডিকেট কারা করছে, এর সঠিক তদন্ত করে তাদের তালিকা হওয়া দরকার। তাতে যদি আমার নামও আসে সমস্যা নেই। তবে করপোরেট ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি ধান কিনে চালের দাম বাড়াচ্ছে।’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘করপোরেট ব্যবসায়ীদের ধরা হয়। মামলা হয়। তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করলে তখন কার দোষ দেবেন? এসব বলে আমাকে উত্তেজিত করবেন না। আর তাঁদের চাল তো ধনীরা নেয়।’
সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের বস্তায় মিলগেটে দাম কত, তা লিখতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে উৎপাদনের তারিখও। সেটা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর দেখাতে হবে। নতুন আইন করা হয়েছে। দ্রুত কার্যকর হবে। এ আইন কার্যকর হলে মিনিকেট নামের কোনো ধান-চাল থাকবে না। চালের দাম বর্তমানে জেলা প্রশাসন যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখতে হবে। কোনোভাবেই বাড়ানো যাবে না।
মন্ত্রী আরও বলেন, চালের বাজার ৯ মাস স্থির ছিল। করোনা মহামারিতেও চালের দাম বাড়েনি। এখন বাড়ছে কেন? প্রয়োজনে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করবে সরকার। ধান–চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন হাতে গোনা কয়েকজন। তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।