ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের কণ্ঠসদৃশ একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিওতে সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুলকে উদ্দেশ করে সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এমপিগিরি করি আর না করি, বাবুলের অস্তিত্ব আমি সদরপুর থেকে বিদায় করব।’ এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক ওরফে আরিফ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়।
আজ রোববার বিকেল চারটার দিকে ফেসবুকে ‘ওয়াহিদ হাসান’ নামের একটি আইডি থেকে অডিওটি আপলোড করা হয়। আপলোডের সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পোস্টটি ১১ হাজার ৪০০ বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে ৫৩৪ বার। ৮৩ জন মন্তব্য করেছেন এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ২৫৭ জন। তবে নিক্সন চৌধুরী কবে, কোথায় ওই বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা জানা যায়নি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকেও অডিওটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, অডিওটি তিনিও শুনেছেন। সেখানে তাঁর কোনো ভিডিও নেই। ছবি ব্যবহার করে একটি অডিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রমাণ করুক, তিনি কখন, কোথায় ওই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরাজয় নিশ্চিত জেনে এসব এডিটিং প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে এতে শেষ রক্ষা হবে না।’
ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের অডিওতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সম্পর্কে নিক্সন চৌধুরীর কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই যে আরিফ ফরিদপুরের। আগামীকাল থেকে আরিফ সদরপুরে আসলে ওরে এমন দাবড় দিবেন, ওর (আরিফ) বাপ ভাঙ্গা উপজেলায় ইলেকশন করে ১৯০০ ভোট পাইছিল। আজকে বক্তব্যে কয় যে উনি গণতন্ত্র রক্ষা করে, আরে ব্যাটা পাগল।’
অডিওতে আরও শোনা যায়, ‘আগামীকাল থেকে আমার নেতা-কর্মীরা কি পাইলেন না পাইলেন, জানি না। ৬৮ সেন্টারে বাবুলের অস্তিত্ব আমি দেখতে চাই না। নইলে আমি সদরপুরে আসব না। আপনারা কি চান আমি সদরপুর না আসি? আপনারা ওয়াদা করবেন যার যার সেন্টারে সকালবেলা চলে যাবেন। নির্বাচন আর শফি কাজীর নাই, আমার নির্বাচন।...বাবুলের অস্তিত্ব থাকবে না ভাঙ্গা-সদরপুরে। এই নির্বাচনের পর বাবুলের কোনো অস্তিত্ব আমি এই সদরপুরের মাটিতে দেখতে চাই না।’ এ সময় শহীদুল ইসলাম বাবুলের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়।
অডিওর বিষয়ে শাহ মো. ইশতিয়াক রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি নিজে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। একটি সম্মানিত পরিবারের সদস্য। উনি কীভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে...বলতে পারেন। একজন এমপি হয়ে কীভাবে উনি ৬৮ কেন্দ্রে বাবুলের অস্তিত্ব রাখবেন না বলতে পারেন। এটিকে কীভাবে নিজের নির্বাচন বলতে পারেন। আমি অন্যায় করলে আমাকে নিয়ে তিনি বলতে পারেন। কিন্তু কীভাবে আমার প্রয়াত বাবাকে নিয়ে কথা বলেন। তাঁর কথাবার্তা, ভাষা, আচরণ আমার মাথায় আসে না।’
তৃতীয় ধাপে ২৯ মে সদরপুরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম (আনারস) ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান (মোটরসাইকেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে শফিকুর রহমানকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।
গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে শহীদুল ইসলামের বাড়িতে এসে তাঁকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যান নিক্সন চৌধুরী। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ভিডিও বার্তা প্রচারের পর শহীদুলের সমর্থকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা শহীদুলের বাড়িতে গিয়ে নির্বাচন করার জন্য চাপ দেন। পরদিন কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফরিদপুর শহরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াকের বাড়িতে আসেন শহীদুল ইসলাম। এ সময় কাজী জাফরউল্যাহর সঙ্গে রাজনীতি করার অঙ্গীকার ও আসন্ন সদরপুর উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে জেলা আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শহীদুল ইসলাম। এরপর শাহ মো. ইশতিয়াক তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, তাঁর প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন আছে।