বন্ধ আন্দরকিল্লা কাউন্সিলরের কার্যালয়। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায়
বন্ধ আন্দরকিল্লা কাউন্সিলরের কার্যালয়। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায়

ওয়ার্ড কার্যালয়ে তালা, সেবা পাচ্ছেন না মানুষ 

সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ ওয়ার্ড কার্যালয় এখনো তালাবদ্ধ। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা কার্যালয়ে আসছেন না।

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা সাড়ে ১১টা পার হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তখনো তালা দেওয়া। যদিও নির্দেশনা অনুযায়ী আড়াই ঘণ্টা আগে সকাল ৯টায় অফিস খোলার কথা। কিন্তু তা হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার এ চিত্র দেখা যায়।

চট্টগ্রাম নগরের শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের কাজীর দেউড়িতে সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হচ্ছেন মো. গিয়াস উদ্দিন। তিনি সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

শুধু বাগমনিরাম ওয়ার্ড নয়, সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ ওয়ার্ড কার্যালয় এখনো তালাবদ্ধ। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা কার্যালয়ে আসছেন না। কাউন্সিলর না আসায় আসছেন না ওয়ার্ড কার্যালয়ের কর্মীরাও। ফলে সেবা নিতে আসা নগরবাসীদের ফেরত যেতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সনদ না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন তাঁরা।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। আর ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থক।

গত সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিন দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর সারা দেশে বিজয় মিছিল বের হয়। চট্টগ্রাম নগরে মেয়রের বাড়িসহ সিটি করপোরেশনের অন্তত ২০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকে অফিস করছেন না মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।

গতকাল নগরের জামালখান, পূর্ব ষোলশহর, উত্তর পাহাড়তলী, পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, এসব কার্যালয়ের প্রতিটি ফটকে তালা দেওয়া। তিন দিন ধরে তালাবদ্ধ থাকায় ওয়ার্ড কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। তবে ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কার্যালয় খোলা ছিল। সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও সেবাপ্রার্থী কাউকে দেখা যায়নি।

নগরের হেমসেন লেনের মুখে অবস্থিত জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়। চারতলা ভবনের দোতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত ওয়ার্ড কার্যালয়। তিনতলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশের কক্ষ। কিন্তু সেটি তালা দেওয়া। একইভাবে তালা দেওয়া তৃতীয় ও চারতলায়।

নিচতলায় ফুলের দোকান। দোকানের এক কর্মচারী জানান, ওয়ার্ড কার্যালয়ে প্রতিদিনই মানুষ আসেন। কিন্তু তালাবদ্ধ থাকায় তাঁরা ফেরত যান। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ, চারিত্রিক সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, ওয়ারিশান সনদসহ প্রয়োজনীয় সব সনদ দেওয়া হয়। এসব সনদে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু এখন তা ইস্যু করা যাচ্ছে না।

সিটি করপোরেশনের মেয়রের অফিসে না আসা এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় চালু না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র এখনো অফিসে করছেন না। মেয়রের সঙ্গে তাঁর এখনো যোগাযোগ হয়নি। আর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়গুলোর বেশির ভাগ ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি খোলার মতো অবস্থা নেই।

শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা না থাকায় মানুষ সেবা পাচ্ছেন না। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।