নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটী গ্রামে ভৈরব নদের তীরে সোমবার বসেছিল পৌষসংক্রান্তির মেলা
নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটী গ্রামে ভৈরব নদের তীরে সোমবার বসেছিল পৌষসংক্রান্তির মেলা

নড়াইলে শত বছরের পৌষসংক্রান্তির মেলা

নড়াইল সদরের শেখহাটী গ্রামের ভৈরব নদের তীরে বটগাছের চারপাশজুড়ে গতকাল সোমবার বসেছিল পৌষসংক্রান্তির মেলা। সেখানে দেশের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পণ্য নিয়ে হাজির হন কয়েক শ বিক্রেতা। কী নেই এ মেলায়! শখের হাঁড়ি, মাটির সরা, ফুল, শোলার ফুল, মাটির পুতুল, কাঠের একতারা, বাঁশের বাঁশি, নকশিকাঁথা, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী, মোয়া, মুড়কি, বাতাসা বা মিষ্টি। ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যের নাগরদোলা।

পৌষসংক্রান্তির এ মেলা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘আফরার মেলা’ নামেও পরিচিত। মেলাটি বসছে ১০৭ বছর ধরে। আশপাশের নানা জায়গা থেকে মেলায় ভিড় করেন কয়েক হাজার মানুষ।

মেলায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দোহাকুলা গ্রাম থেকে শিশুদের খেলনা ঢোল নিয়ে এসেছেন হাজারী দাস (৬৫)। তিনি বলেন, ‘৫৫ বছর ধরে এই মেলায় নিজের তৈরি খেলনা ঢোল বিক্রি করছি। মাত্র একদিন মেলা হয়। সকাল থেকে মেলা শুরু হয়। চলে রাত পর্যন্ত। তবে দুপুরের পর মেলায় লোকসমাগম বাড়তে থাকে।’

মেলায় এসেছেন নড়াইল সদর উপজেলার দেবভোগ গ্রামের গোষ্ট মৈত্র (৬৫) বলেন, ‘ছোটবেলায় মায়ের কোলে করে এ মেলায় আসতাম। প্রতিবছরই এ মেলায় আসি। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীও মেলায় এসেছেন। ঐতিহ্য ধরে রেখেছে আফরার মেলাটি।’

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের জোবায়ের হোসেন (৪৬) বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এ মেলায় আসি। মাঝে কয়েক বছর মেলায় আসতে পারিনি। এবার মেলায় এসে ভালো লাগছে। মেলা ঘুরে ঘুরে দেখছি। পছন্দের খাবার কিনে খাচ্ছি।’

নড়াইল সদর উপজেলার আফরা গ্রামের খবির শেখ (৬৪) বলেন, ‘আফরার মেলায় সব ধর্মের মানুষ আসেন। মেলায় বেশি আসেন নারীরা। মেলা থেকে নাতির জন্য একটি খেলনা কিনেছি।’

মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি অরুণ সাহা। তিনি বলেন, ‘শেখহাটী গ্রামে ভুবনেশ্বরী মায়ের শতবর্ষী মন্দির রয়েছে। ১০৭ বছর আগে মকরসংক্রান্তিতে সেই মন্দিরের পুরোহিত স্বপ্নে দেখলেন, ভুবনেশ্বরী মা তাঁকে আদেশ করছেন পাশের গঙ্গা থেকে জল এসে তাঁকে (ভুবনেশ্বরী মা) স্নান করাতে। সেখান থেকে এই দিন গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। মেলাও শুরু সেই থেকে। এটা পৌষসংক্রান্তির মেলা।’

নড়াইল সদরের শেখহাটী গ্রামের ভৈরব নদের তীরে সোমবার বসেছিল পৌষসংক্রান্তির মেলা

মেলার আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং যশোর সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুজিত বিশ্বাস বলেন, ‘১০০ বছরের বেশি সময় ধরে একই দিনে মেলাটি বসছে। দূরদূরান্তের মানুষ এখনো আসেন মেলায়। সে কারণে সব ধরনের সুবিধার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।’