নাটোরে আন্তস্কুল ফুটবল খেলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের তুলকালাম কাণ্ড

বিজয়ী ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রতিবাদে নুরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলা মোড়ে নাটোর-বাগাতিপাড়া সড়কে
 ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় আন্তস্কুল ফুটবল খেলায় কয়েকজন খেলোয়াড়ের ছাত্রত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিপক্ষ দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা নিয়ে দুটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়েছে। দফায় দফায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেও সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছে উপজেলা পরিষদ।

বাগাতিপাড়া উপজেলার আন্তস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট কমিটি সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৫০তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে। গত সোমবার টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাগাতিপাড়া সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও নুরপুর মালঞ্চি উচ্চবিদ্যালয়। বাগাতিপাড়া সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ম্যাচটির আয়োজন করা হয়। খেলা শুরুর আগে ম্যাচের রেফারি আবদুল বারী সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের ছাত্রত্ব প্রমাণের জন্য কাগজপত্র দেখতে চান। কিন্তু পাঁচজনের বেশি খেলোয়াড়ের কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে ভেন্যুপ্রধান হিসেবে সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী নুরপুর মালঞ্চি উচ্চবিদ্যালয় দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাগাতিপাড়া সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা স্কুলগেট-সংলগ্ন বিহারকোল মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

পরদিন মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে নুরপুর উচ্চবিদ্যালয়কে বিজয়ী ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে উভয় দলের মধ্যে নতুন করে খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন ভেন্যু হিসেবে জিগরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নুরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের খেলোয়াড়েরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ। তারা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তমালতলা বঙ্গবন্ধু চত্বরের চারমাথা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে যানবাহন আটকে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে নুরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফিফার পরিপত্র অনুসারে, আন্তস্কুল খেলায় খেলোয়াড়দের অবশ্যই স্ব-স্ব স্কুলের ছাত্রত্ব প্রমাণ করতে হবে। সোমবারের খেলায় সরকারি স্কুলের খেলোয়াড়দের ছাত্রত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় রেফারির পরামর্শে ভেন্যুপ্রধান অনিতা রানী নুরপুর স্কুল দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। পরে সরকারি স্কুলের ছাত্রদের দাবির মুখে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আবার খেলা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ছাত্ররা মানতে নারাজ। তবে এ ব্যাপার বৃহস্পতিবার আবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নেওয়া উচিত।

প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রেফারির চাপে পড়ে নুরপুর উচ্চবিদ্যালয় দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন, যা তাঁর ছাত্ররা মেনে নেয়নি। এখন উপজেলা প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা মেনে নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি স্কুলের খেলোয়াড়দের নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। কিছু শিক্ষক ছাত্রদের উসকানি দেওয়ার কারণে কিছুটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।