প্রচারণার শেষ মুহূর্তে ভোটের এক দিন আগে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় হতাশ দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ভোটাররা। তাঁরা এর জন্য দায়ী করেছেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইউছুফ ভূঁইয়াকে। নির্বাচনে পরাজিত হবেন এই আশঙ্কায় নেপথ্যে থেকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দিয়ে স্থগিত করার ব্যবস্থা করান। আগামীকাল বুধবার ওই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন দোয়াত-কলম প্রতীকের নাজমুল হাছান ওরফে বাছির ভূঁইয়া, আনারস প্রতীকের মো. ইউসুফ ভূঁইয়া ও কাপ-পিরিচ প্রতীকের মাজহারুল ইসলাম। এর মধ্যে নাজমুল ও ইউসুফ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁদের গ্রাম বদরপুর। তাঁরা একই বাড়ির বাসিন্দা। ইউসুফ উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান, বাছির ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। অপর প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিএনপিপন্থী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাঙ্গলকোটে আওয়ামী লীগের দুটি ধারা। এর মধ্যে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইউসুফ ভূঁইয়া নাঙ্গলকোট উপজেলা একাংশের নেতা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান (এবার প্রার্থী হননি) সামছুদ্দিন কালু, নাঙ্গলকোট পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল মালেক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের একান্ত সহকারী কে এম সিংহ রতনের অনুসারী। অন্যদিকে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী নাজমুল হাছানের পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রফিকুল হোসেন, সাবেক আহ্বায়ক আবু ইউসুফ ও জেলা পরিষদের সদস্য আবু বকর সিদ্দিকসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ছালেহ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন হলে বাছির ভাই (নাজমুল হাসান) বিপুল ভোটে জিততেন। নির্বাচনে মো. ইউসুফ ভূঁইয়া পরাজিত হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী ছালেহা বেগমকে দিয়ে আদালতে প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিট করেন। মাঠের নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই বাছিরের পক্ষে। এ অবস্থায় পরে নির্বাচন হলে প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনে জিততে চান ইউসুফ।’
একই রকম দাবি নাজমুল হাছানেরও। হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত করা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘৮ মে নির্বাচন হলে সুষ্ঠু ভোটে জিততাম আমি। নাঙ্গলকোটের সিন্ডিকেটের একটি অংশ কৌশলে নির্বাচন স্থগিত করানোর ব্যবস্থা করে। নাঙ্গলকোটবাসী ভোটের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। বিদেশ ও শহর থেকে সবাই এলাকায় ভোট দিতে এসেছেন। পুরো এলাকা উত্সবমুখর ছিল। সেখানে হুট করে নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেল।’
হতাশা প্রকাশ করেছেন মাজহারুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের প্রচারণা প্রায় শেষ। প্রচারণা শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে এমন ঘটনা ঘটল। আমরা হতাশ।’
তবে নির্বাচন স্থগিতের পেছনে নিজের কোনো হাত নেই বলে দাবি করেছেন ইউসুফ ভূঁইয়া। অন্য প্রার্থীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ তোলা হয়েছে। ছালেহা বেগম তাঁর প্রার্থিতা ফিরে পেতে আদালতে যান। আদালত তাঁর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন। নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।’
রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন রায়কোট উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ছালেহা বেগম। পদত্যাগ না করে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান। এরপর ছালেহা বেগম আপিল করেন। সেখানেও তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
পরে ২৫ এপ্রিল উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পান ছালেহা বেগম। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সোমবার আপিল বিভাগ আদেশে ‘নো অর্ডার’ প্রদান করেন। এমতাবস্থায় ওই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নাঙ্গলকোট উপজেলার সব পদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি গত সোমবার রাত ১০টায় কুমিল্লায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। পরে রাত ১১টায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছালেহা বেগম উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের চিঠি পেয়েছি সোমবার রাত ১০টায়। রাত ১১টায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নির্বাচন ছিল ৮ মে। এত স্বল্প সময়ে ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে না। তাই নির্বাচন স্থগিত করা হয়। কমিশন পরে নির্বাচনের তারিখ দেবে।’