খুলনার রূপসা উপজেলার সালাম জুটমিলে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ধোঁয়া ও তাপ নিয়ন্ত্রণ (ডাম্পিং ডাউন) কাজ চলছে। আজ বৃহস্পতিবারও এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তার কারণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে পাটকলের শ্রমিক–কর্মচারীরা বলেছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।
পাটকল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, গতকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাদের গুদামে থাকা পাটের তৈরি নানা ধরনের পণ্য, অন্যান্য মালামাল ও যন্ত্রপাতি পুড়ে তাঁদের শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইফুজ্জামান বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, খুলনা সদর, টুটপাড়া, খালিশপুর ও ডুমুরিয়ার চারটি ইউনিট ধোঁয়া ও তাপ নিয়ন্ত্রণ কাজ করছে। তবে কখন এটা শেষ করা যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা পার হতে পারে বা তাঁর কিছু আগেও শেষ হতে পারে।
আজ রূপসার ওই পাটকলে গিয়ে দেখা যায়, পাটকলের প্রধান ফটকের বাইরে উৎসুক জনতা ও শ্রমিকদের ছোটখাটো জটলা রয়েছে। কারখানার সব যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে। পাটকলেন টিনের ছাউনি ও লোহার কাঠামো পুড়ে ও গলে গেছে। পুড়ে যাওয়া পাটের সুতার স্তূপ থেকে ধোঁয়া উড়ছে। কোনো কোনো শ্রমিক ভেতরে ঢুকে বিমর্ষ অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের কাজ দেখছেন। তাঁদের মধ্যে সাপ্তাহিক বেতন, ঈদের বোনাস পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা যেমন আছে, তেমনি নতুন করে কাজ খুঁজে পাওয়া নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা গত বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সালাম জুট মিলের ৩ নম্বর গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাশের আরও দুটি গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কর্মরত শ্রমিকরা ভয়ে গুদাম থেকে বেরিয়ে আসেন। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তাঁরা। খুলনা সদর, খালিশপুর, দৌলতপুর, রূপসা, ফকিরহাট ও বটিয়াঘাটা ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ও নৌবাহিনীর ফায়ার ইউনিট যৌথভাবে কাজ করে গতকাল বুধবার মধ্যরাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই পাটকলের জ্যেষ্ঠ উৎপাদন কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুটমিলে ৩৫০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করে থাকেন। আগুন লাগার দিন ২০০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ৩টি গুদামে ৭৫০ টন উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছিল। বুধবার রাত থেকেই সেগুলো শিপমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর বাইরেও প্রায় ৪০ টন পাট উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ছিল। যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো, পণ্য কারখানার সবকিছুই পুড়ে গেছে। তবে আমরা জানানোর ঘণ্টাখানেক পরে ফায়ার সার্ভিস কাজ শুরু করেছে।’
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (খুলনা) ফারুক হোসেন সিকদার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কীভাবে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে, তা এখনো জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই পাটকল একটা জেলখানার মতো জায়গা, তার ওপর পাটের আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে সময় লাগে। এখন মালিকপক্ষকে তাদের কারখানার টিন খোলা ও মালামালগুলো সরিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা তোয়ক্কা করছে না। এতে ডাম্পিং ডাউনে আরও সময় লাগছে।’
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘আগুন লাগা জুট মিলে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না। তাঁদের বারবার এ বিষয়ে নোটিশ করা হলেও তারা শোনেননি।’ তবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তার দাবি নাকচ করে দিয়ে পাটকলের জ্যেষ্ঠ উৎপাদন কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা মেনেই তাঁদের কারখানা চলত।