বাঘের থাবা থেকে বেঁচে ফেরা কুদ্দুসকে কুমিরের মুখ থেকেও ফেরালেন সঙ্গীরা

কুমিরের আক্রমণে আহত আবদুল কুদ্দুস
ছবি: সংগৃহীত

বাঘের পর এবার কুমিরের মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বনজীবী আবদুল কুদ্দুস (৫৫)। গত শনিবার সুন্দরবনের কলাগাছী নদীতে কুমিরের আক্রমণে আহত আবদুল কুদ্দুস সোমবার লোকালে ফেরেন। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

আবদুল কুদ্দুস শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের বাসিন্দা। কুমিরের আক্রমণে তাঁর বাঁ হাত জখম হয়েছে। সুস্থ হতে দু-তিন সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।

আবদুল কুদ্দুসের ছোট ভাই আবদুল হালিম জানান, ১৮ মে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতি) নিয়ে তাঁরা ছয় সদস্যের দল সুন্দরবনে যান। বিভিন্ন এলাকায় মুধ সংগ্রহ করতে করতে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে কালাগাছী এলাকায় আসেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর নৌকা থেকে বনে নামেন। ওই দিন অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি চাকে এক মণের বেশি মুধ পাওয়ায় তাঁরা আগেভাগে কাজ শেষ করেন।

আবদুল হালিমের বর্ণনা অনুযায়ী, ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে কলাগাছী নদীর চরে বসে গোসল করছিলেন তাঁর ভাইসহ পাঁচজন। হঠাৎ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে একটি কুমির আবদুস কদ্দুসকে আক্রমণ করে। গোসল করার একপর্যায়ে তাঁর বাঁ হাত কামড়ে ধরে নদীতে নিয়ে যায় কুমিরটি।

আবদুল হালিম আরও বলেন, কুদ্দুসকে নদীর মধ্যে দাপাদাপি করতে দেখে সবাই হকচকিয়ে যান। পানিতে রক্ত ভেসে উঠতে দেখেন তাঁরা। এ সময় পানির ওপরে লেজ দেখতে পেয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন, কুদ্দুসকে কুমির ধরেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা লাঠি, পাতিল আর নৌকার বইঠা দিয়ে পানিতে জোরে জোরে আঘাত করে শব্দ করার পাশাপাশি কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করেন। তিন-চার মিনিট এমন অবস্থা চলার পর শিকার ছেড়ে নদীর গভীরে চলে যায় কুমিরটি। পরে কুদ্দুসকে উদ্ধার করে নৌকায় নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার এ ঘটনা ঘটার পর ঝোড়ো বাতাসের কারণে তাঁদের বাড়িতে ফিরতে সোমবার সন্ধ্যা হয়ে যায়।

আবদুস কুদ্দুস বলেন, কুমির যখন ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, মনে হয়েছিল, তিনি আর বাঁচবেন না। একদিকে কুমির, অন্যদিকে সঙ্গীরা ধরে টানাটানির একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার ভাই আবদুল আলিমসহ অন্য সঙ্গীদের চেষ্টায় তিনি ফিরে আসতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন তিনি। সেবারও সঙ্গীদের চেষ্টায় ফিরে আসতে পেরেছিলেন। এর আগে ২০০৮ সালে মধু কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন তাঁদের দলে থাকা তাঁর খালু দাতিনাখালী গ্রামের গোলাম মোস্তফা।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, গত ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে মৌয়ালদের সতর্ক করা হয়। বৈধভাবে সুন্দরবনে গিয়ে বন্য প্রাণীর শিকার হয়ে হতাহত হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে।