বৃষ্টির পানি জমেছে বাড়ির উঠানে। ঘরেও ঢুকেছে পানি। গতকাল মঙ্গলবার আখাউড়া পৌরসভার সড়ক বাজারে ডাকঘর এলাকায়
বৃষ্টির পানি জমেছে বাড়ির উঠানে। ঘরেও ঢুকেছে পানি। গতকাল মঙ্গলবার আখাউড়া পৌরসভার সড়ক বাজারে ডাকঘর এলাকায়

বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকেন তাঁরা, বাড়িঘরে ঢোকে পানি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার সড়ক বাজারের মোড়ে ডাকঘর এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি ঢুকছে চারটি পরিবারের বাড়িঘরে। তিন বছর ধরে তাঁরা এই ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ উন্নয়নকাজের জন্য সেখানে পানি নিষ্কাশনের নালা ভেঙে ফেলেছিল। এরপর আর মেরামত করেনি। বৃষ্টি হলেও তাঁরা আতঙ্কে থাকেন। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় তাঁদের বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

আখাউড়া পৌরসভার প্রধান সড়ক বাজারের মোড়ে ডাকঘরের পূর্ব দিকে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলমগীর করিমের (বীর প্রতীক) বোন মনোয়ারা বেগমের পরিবার, ইয়াছিন খাদেম, হারুণ খাদেম ও শাহাজাহান মিয়ার বাড়ি। চারটি পরিবারে সদস্যসংখ্যা প্রায় ২৫। পানি নিষ্কাশনের ওই চার বাড়ির সামনের পশ্চিম দিক দিয়ে এবং ডাকঘরের উত্তর দিকসংলগ্ন একটি নালা ছিল। নালাটি ডাকঘর ও মসজিদের মাঝামাঝি রাস্তা দিয়ে সড়ক বাজারের নালার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিন বছর আগে উন্নয়নকাজের জন্য নালাটি ভেঙে ফেলে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকে বৃষ্টি হলেই ওই চার বাড়িঘরে পানি ঢুকছে।

পানিবন্দী পরিবারের সদস্যরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। আর এ সময় বাড়ির উঠানে পানি জমেছে। ঘরেও ঢুকেছে পানি। বাড়ির পেছনের দিকে পুকুরের পাশে বেশ উঁচু করে বাঁধ দেওয়া আছে যেন পানি ঢুকতে না পারে। প্রবেশমুখেও রয়েছে পানি আটকানোর ব্যবস্থা। এতে আশপাশ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য পানি আসা বন্ধ করা গেছে। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে উঠানে হাঁটুসমান পানি জমে যায়।

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর করিমের ভাগনে রুহুল আমিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘উন্নয়নকাজের জন্য নালা ভেঙে ফেলা হলেও পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। অসংখ্যবার পৌর মেয়র, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেছি। কোনো সুরাহা হয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। দুটি মোটর (সেচযন্ত্র) কিনেছি। বৃষ্টি হলে মোটরের সাহায্যে পানি সরাতে হয়। তারপরও ঘরের ভেতরে হাঁটুপানি।’

উন্নয়নকাজের জন্য নালা ভেঙে ফেলা হলেও পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। অসংখ্যবার পৌর মেয়র, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেছি। কোনো সুরাহা হয়নি।
রুহুল আমিন, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য

এ বিষয়ে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিপন হায়দার বলেন, ‘পরিবারটির দুর্দশা দেখলে চোখে পানি আসে। এভাবে দিনের পর দিন মানুষ পানিবন্দী হয়ে থাকতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আমি পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। দীর্ঘদিনেও এর কোনো সুরাহা হয়নি।’

সেখানকার পানি সরানোর জন্য একটি নালার নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন বলে জানান পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নির্মাণকাজের জন্য একজন ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত নালা নির্মাণ করা হবে।’

নালা নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘নালা নির্মাণের জন্য পৌরসভা যে জায়গা দেখিয়েছে, সেটি ডাকঘরের। সেখানে নির্মাণকাজের জন্য ডাকঘর কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। পৌর কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে ফয়সালা দিতে পারে, তাহলে আমি কাজ শুরু করে দেব।’