সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠার পর শুধু অবাক হওয়ার পালা। ছাদটি যেন একটুকরা ফুলের বাগান। দেশি চন্দ্রমল্লিকা থেকে শুরু করে বিদেশি ফুল রেইন লিলি—কী নেই সেখানে! গোলাপ ফুলের চারাই আছে ৩৯ জাতের। ফুলে ফুলে উড়ে এসে বসছে মৌমাছি, প্রজাপতি। সারা দিনের ক্লান্তি মুছে ফেলতে এ ছাদবাগান যেন মহৌষধ।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন তাঁর কার্যালয়ের ছাদে এমনই একটি ফুলের বাগান গড়ে তুলেছেন। কাজের ফাঁকে, কাজ শেষে যেটুকু অবসর মেলে, সেই সময়টুকু এই ছাদবাগান ঘিরেই কাটছে তাঁর।
কার্যালয়ের কর্মীরা বলেন, আগে বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের ছাদে শাকসবজির চাষ হয়েছে। তবে সেটা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে। বাকি সময় ছাদ খালিই পড়ে থাকত। সম্প্রতি মনোয়ার হোসেন যোগ দেওয়ার পর ছাদে ফুল চাষের পরিকল্পনা করেন। মানসিক প্রশান্তি, মনের খোরাক, মনের আনন্দ খুঁজতে গিয়ে ফুলকেই তিনি বেছে নেন।
মনোয়ার বলেন, প্রথমে তিনি কার্যালয়ের ছাদটিকে ফুল চাষের উপযোগী করে তৈরি করতে থাকেন। শুরু করেন ফুল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের কাজ। রঙের খালি বালতি, সিমেন্টের টব, পোড়ামাটির টব, প্লাস্টিকের অর্ধেক ড্রাম ও ফলের ক্রেটস। এগুলো লোহার কাঠামোর ওপর এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে ছাদের কোনো ক্ষতি না হয়। দোআঁশ মাটি, কেঁচো সার, কোকো পিট, ট্রাইকো কম্পোস্ট, মোটা বালু, ইটের খোয়া, গোবর সার, পচা পাতা, ডিমের খোসা, শর্ষের খইল ও সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দিয়ে টবের মাটি প্রস্তুত করেন। মাটি প্রস্তুত করে কিছুদিন রেখে দেন। পরে বিভিন্ন নার্সারি থেকে খুঁজে খুঁজে চারা জোগাড় করেছেন। অনলাইন মাধ্যমেও ফুলের চারা সংগ্রহ করেছেন।
কী কী গাছ আছে এ ছাদবাগানে? জানতে চাইলে মনোয়ার বলেন, তাঁর এই বাগানে দেশি-বিদেশি শতাধিক জাতের ফুল আছে। দেশি-বিদেশি গোলাপ আছে ৩৯ জাতের। আছে জারবেরা ১৩ জাতের, রেইন লিলি ২৩ জাতের, এডেনিয়াম ৫০ জাতের, বাগানবিলাস ২০ জাতের, গ্লাডিওলাস ৮ জাতের, কাঠগোলাপ ১০ জাতের। পর্তুলিকা বা টাইম ফুল আছে ৪৫ জাতের, কাঁটামুকুট আছে ৮ রকমের, চন্দ্রমল্লিকা ৩ জাতের, গাঁদা ২ জাতের। আরও আছে রজনীগন্ধা, গোল্ডেন শাওয়ার, বাসরলতা, লতা পারুল, পয়েনশেটিয়া, দোপাটি, ক্যালেনডুলা সূর্যমুখী ও মাধবীলতা। ফুল হয় না, কিন্তু সৌন্দর্য বর্ধন করে, এমন গাছের মধ্যে আছে লাকি ব্যাম্বু, রিও প্ল্যান্ট, টাই প্ল্যান্ট, ক্যাকটাস, মানি প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট, কার্টেন ক্রিপার, পাথোস ও জেব্রিনা।
কিছু ফলের গাছও আছে। বেশির ভাগই আমের—সূর্যডিম, কিউজাই, বারি আম-৪, ব্যানানা ম্যাংগো, ব্রুনেই কিং। আছে সফেদা, জারা লেবু, ড্রাগন ফল ও মাল্টা। ঔষধির মধ্যে পুদিনা, অ্যালোভেরা, তুলসী ও লেটুস পাতা। ফুলের বাগান কেন্দ্র করে ভিড় করেছে মৌমাছিরা, প্রজাপতি দল। তাই মৌ-চাষের জন্য স্থাপন করেছেন মৌ-বাক্স।
মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিজের হাতে লাগানো ফুল গাছে ফুল ফুটলে অনেক আনন্দ লাগে। বাগানের ফুল সব কষ্ট দূর করে দেয়, মনকে রাঙিয়ে তুলে। অনেকে ফুল দেখতে ছাদবাগানে আসেন, নিজেরাও বাগান করতে চান। অন্যরা প্রকৃতিকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, যা আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। কেউ ছাদবাগান করতে চাইলে আমি তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আসুন, ফুল ও পরিবেশকে ভালোবাসি।’