কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর উদ্যাপন নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার উপজেলার ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা আজ দুপুরে উপজেলার প্রতাপনাথ বাজার এলাকায় ছয়সূতি গাউছিয়া দরবার শরিফের আস্তানায় ভাঙচুর চালায়।
নিহত মীর আরিফ মিলন (৫৫) ছয়সূতি মীরবাড়ির মীর জমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন।
খবর পেয়ে বিকেল চারটার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী, ইউএনও সাবিহা ফাতেমা–তুজ জোহরাসহ সেনা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুলিয়ারচরে কয়েক বছর ধরে দুটি পক্ষ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নামে একটি সংগঠন। অপর পক্ষটি ইমাম ওলামা পরিষদ। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সংগঠনের সদস্যরা জশনে জুলুশ কর্মসূচি পালন করে। এটি মাজারপন্থী। অপর পক্ষটি সিরাদুন্নবী (সা.) নামে পৃথক কর্মসূচি করে। তারা মাজারপন্থীর বিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত। এই বছর দুটি পক্ষই পৃথক কর্মসূচি পালনে বেশি তৎপর ছিল।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে আগামী বুধবার ছয়সূতি গাউছিয়া দরবার শরিফে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর। তাঁর আগমনের কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন ইমাম ওলামা পরিষদের নেতারা। তাহেরীর আগমন ঠেকাতে তাঁরা ইউএনও সাবিহা ফাতেমা–তুজ জোহরার কাছে লিখিত আবেদন করেন। বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউএনও দায়িত্ব দেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহানকে। ওসি আগের দিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নেতাদের সঙ্গে সভা করে ওয়াজ মাহফিল স্থগিত করান।
এ অবস্থায় ইমাম ওলামা পরিষদ আজ সকাল ১০টায় ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিরাদুন্নবী (সা.) কর্মসূচি ঘোষণা করে। একই সময় জশনে জুলুশের মিছিল বের করার ঘোষণা দেয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। ওসির মধ্যস্থতায় ইমাম ওলামা পরিষদের কর্মসূচির সময় নির্ধারণ করা হয় বিকেলে। সকালে সুন্নাত ওয়াল জামাত মিছিল বের করে। বেলা ১১টার দিকে লোকজন মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। মিছিলের কিছু মানুষ ঢুকে পড়ে ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে গিয়ে উপস্থিত কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এ সময় মসজিদের কিছুটা দূরে ছিলেন মীর আরিফ। তিনি তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। আহত হন আরও কয়েকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুপুরে মীর আরিফের মৃত্যু হয়।
এদিকে মীর আরিফের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে ছয়সূতি গাউছিয়া দরবার শরিফে হামলা চালায়। বেলা আড়াইটার দিকে আলেমা ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে ছয়সূতি বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় হামলা ও মীর আরিফের মৃত্যুর জন্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে দায়ী করা হয়।
ইমাম ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মওলানা আসাদুল্লাহ বলেন, ‘ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আগামীকাল ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করব।’
নিহত মীর আরিফের ভাতিজা মীর সোহাগ অভিযোগ করেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোকজন তাঁর চাচাকে পিটিয়ে মেরেছেন।
ওসি সারোয়ার জাহান বলেন, ‘সংঘাতের আশঙ্কায় আমরা আগ থেকে পক্ষ দুটির কর্মসূচি পৃথক স্থান ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। তারপরও সংঘাত এড়ানো গেল না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ এখনো অভিযোগ করেননি।’