ডুবোচরের কারণে সম্পূর্ণ ভরা অবস্থায় কোনো জাহাজ এ বন্দরে বর্তমানে ভিড়তে পারছে না। জাহাজগুলো পাবনা ও যশোরের বন্দরে ভিড়ছে।
চার নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নাব্যতা–সংকটের কারণে অচল হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি। শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই বিভিন্ন জায়গায় ডুবোচর জেগে উঠেছে। ফলে চট্টগ্রাম ও মোংলা নৌবন্দর থেকে পণ্যবাহী কার্গো বা জাহাজ সম্পূর্ণ ভরা অবস্থায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে যেতে পারছে না।
এদিকে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে কর্মরত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁরা পরিবার–পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, উত্তরাঞ্চলের প্রধান নৌবন্দর বাঘাবাড়ী। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বেশির ভাগ সার এ বন্দরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া সিমেন্টের কাঁচামাল, কয়লা, পাথর ও তেলসহ বিভিন্ন পণ্য জাহাজে করে এ বন্দরে আসে চট্টগ্রাম ও মোংলা নৌবন্দর থেকে।
ওই দুই বন্দর থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসতে হলে কোনো জাহাজ বা কার্গোকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বড়াল নদী অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু চর নাকালিয়া, পেচাকোলা, মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, পাটুরিয়া, নিকলীসহ নানা পয়েন্টে ডুবোচর জেগে উঠেছে। সে কারণে সম্পূর্ণ ভরা অবস্থায় কোনো জাহাজ এ বন্দরে বর্তমানে ভিড়তে পারছে না। জাহাজগুলো অন্য বন্দরে ভিড়ছে।
শ্রমিকেরা বলেন, পাবনার বেড়া, নগরবাড়ী ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে মালামাল খালাস করা হচ্ছে। পাবনার নগরবাড়ী ও বেড়া এবং যশোরের নওয়াপাড়ায় থেকে ট্রাকে করে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের বাফার গুদামে সার এনে এরপর উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ গ্রামের সার ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, তাঁরা শুনেছেন, নদীপথে নাব্যতা–সংকটের কারণে বর্তমানে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে সার আসা বন্ধ রয়েছে। এসব সার পাবনার বেড়া, নগরবাড়ী ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে খালাস হচ্ছে। পরে ট্রাকে করে এলাকায় আসছে। যে কারণে সার এলাকায় পৌঁছাতে বেশি সময় লাগছে। এ বিড়ম্বনা দূর করতে তাঁরা নদী খননের আহ্বান জানান।
সম্প্রতি এমভি ফয়সাল-৭–এর মাস্টার (জাহাজচালক) সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ২০ হাজার বস্তা চাল নিয়ে বাঘাবাড়ী ঘাটে আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে তাঁকে আরিচা ঘাটে থেমে যেতে হয়। পরে সেখান থেকে দুটি ছোট বাল্কহেডে করে ওই চাল বাঘাবাড়ী ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে।
সম্প্রতি বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরে কোনো কর্মচাঞ্চল্য নেই। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৪ ডিসেম্বর একটি সারবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসে। তা–ও আগের জাহাজ আসার ১৫ দিন পরে ওই জাহাজ আসে। তখন কিছু সময়ের জন্য বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। ১ ঘণ্টা পর কাজ শেষ হলে বন্দরটি আবার অচল হয়ে পড়ে। অথচ আগে শুষ্ক মৌসুমেও প্রতিদিন কমপক্ষে চার-পাঁচটি জাহাজ বন্দরে ভিড়ত। অথচ আগে একটি জাহাজের মালামাল খালাস করার আগেই আরেকটি জাহাজ চলে আসত।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের শ্রমিক ওমর ফারুক ও জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত ৪০ বছরেও বাঘাবাড়ী নৌবন্দর এভাবে জাহাজশূন্য হয়নি। ডুবোর ও
নাব্যতা–সংকট কারণে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার–পরিজন নিয়ে তাঁরা কোনোমতে খেয়ে না–খেয়ে বেঁচে আছেন।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দর শ্রমিক এজেন্ট আবুল সরকার বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাঘাবাড়ী ঘাট ইজারা নিয়েছি। জাহাজ না আসায় আমাদের শ্রমিকেরা সব বেকার হয়ে পড়েছেন। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
বাঘাবাড়ী নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল ওয়াহাব বলেন, অনেক জায়গায় ডুবোচর জেগে উঠেছে। ফলে পূর্ণ লোডে পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত নদী খনন করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
তবে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, বাঘাবাড়ী বন্দরের নৌ রুটে নাব্যতা সংকট নেই। এখানে ৮ থেকে ১০ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। এটা দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর। ফলে এ বন্দর চ্যানেলে নিয়ম অনুযায়ী সাত থেকে আট ফুট গভীরতার জাহাজ চলার কথা। নিয়ম অমান্য করে সেখানে ১০-১২ ফুট গভীরতার জাহাজ নিয়ে গেলে তো সমস্যা হবেই। যে কারণে বন্দরটি প্রথম শ্রেণির বন্দরে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে।