ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্মেলনের দেড় বছরের বেশি সময় পর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে বহিষ্কৃত নেতা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে।
২০২২ সালের ১২ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুই সহসভাপতি মিলিয়ে কেবল পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ১৮ মাস পর গতকাল বুধবার রাতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরে স্বাক্ষরে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের এই কমিটিতে সভাপতি গণপূর্ত ও গৃহায়ণমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির। তবে সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহবুবুল বারী চৌধুরী। নতুন কমিটিতে তিনি এবার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের নবঘোষিত কমিটিতে নতুন মুখই বেশি। ৭৫ সদস্যের কমিটিতে ১২ জনকে সহসভাপতি, তিনজন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ৩৬ জনকে কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। এর বাইরে ১৮ জনকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। সদস্যদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নাম ১ নম্বরে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের নাম ৩ নম্বরে এবং আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিনের নাম ৪ নম্বরে রয়েছে। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম ও ফরহাদ হোসেনকে ৫ ও ৬ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জুর রহমানকে কোনো পদে রাখা হয়নি। ১৮ জন উপদেষ্টার মধ্যে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্তের নাম ১ নম্বরে এবং সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের নাম ১৭ নম্বরে রয়েছে।
সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁকে কী দেওয়া হলো না হলো—এতে কিছু যায় আসে না।
একরামুজ্জামান আরএকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর গত বছরের ২৯ নভেম্বর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে জেলা ও উপজেলা বিএনপি একরামুজ্জামানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলার ছড়ি প্রতীকে ৮৯ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন একরামুজ্জামান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকার প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন।
এর আগে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে নির্বাচন করেন একরামুজ্জামান। তিনবারই তিনি পরাজিত হন।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ঢাকা বোট ক্লাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে নাসিরনগর উপজেলার সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন সংসদ সদস্য একরামুজ্জামান। সভায় নাসিরনগর উপজেলার প্রায় ৩০০ জন জনপ্রতিনিধি অংশ নেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একরামুজ্জামান দল ছেড়ে সুযোগের সন্ধানে চলে গেছেন, তাঁকে আওয়ামী লীগের কোনো পদে পদায়ন করল কি করল না, তাতে কিছু যায় আসে না। আজ অন্য দলের সুসময়ে তিনি বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন। আবার আগামী দিনে বিএনপির সুসময়ে ওই দল ছেড়ে এবং বেইমানি করে বিএনপিতে যোগ দেবেন। কারণ, তিনি সুযোগসন্ধানী নেতা। আগে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন, আর এখন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা।