তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি ৯ শতাংশ বাড়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন সাভারের আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা। বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ১৫ শতাংশ করা, অর্জিত ছুটির টাকা প্রতি মাসে পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় অন্তত ২৫টি কারখানা আজ বুধবার দুপুরের আগে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শিল্প–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাসা গ্রুপের তিনটি কারখানা ১৩(১) ধারা অনুসারে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫-৩০টি কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় দুপুরের আগে বিভিন্ন সময়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বের হয়ে যান। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, আজ বুধবার আশুলিয়ায় ইনক্রিমেন্ট ১৫ থেকে ২০ শতাংশের দাবিতে কাজ বন্ধ বা শ্রমিকেরা কাজ না করে চলে গেছেন এমন কারখানার সংখ্যা ২৫।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও একাধিক কারখানার শ্রমিকেরা জানান, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা কয়েক দিন ধরে শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, বার্ষিক অর্জিত ছুটির বকেয়া টাকা প্রতি মাসে পরিশোধ, ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবিতে একাধিক কারখানার শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
গত সোমবার ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির পঞ্চম বৈঠকে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি ৯ শতাংশের সিদ্ধান্ত হয়। শ্রমিকদের অনেকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। আজ বুধবার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা যথাসময়ে কারখানায় উপস্থিত হলেও কাজ না করে কারখানার ভেতরের অংশে বসে কর্মবিরতি পালন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসা সুপার গার্মেন্টস লিমিটেডের এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে (বুধবার) সকালে গার্মেন্টসে যাব ওই সময় একজন ফোন কইরা কইলো ফ্যাক্টরি বন্ধ দিছে। তাই যাই নাই। আমাদের দাবি ইনক্রিমেন্ট বাড়াইতে হইবে। বেতনও বাড়াইতে হইবে।’
আশুলিয়ার একটি কারখানার এক নারী শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে আমরা গার্মেন্টেসে গেছিলাম। আমাদের মজুরি ১৫ পার্সেন বাড়াইতে হবে। বেতন ২৫ হাজার টাকা করতে হবে, আর দাবি ছুটির টাকা মাস শেষে দিতে হবে। সকালে সবাই কাজ ধরছিল। একটু পর আবার বন্ধ করে দিছে। সাড়ে ১০টার দিকে স্যার মাইকে ছুটির ঘোষণা দিলে বাসায় চইলা আসছি।’
বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অরবিন্দ বেপারী প্রথম আলোকে বলেন, সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির পঞ্চম বৈঠকে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি ৯ শতাংশের সিদ্ধান্ত হয়। বছরের শুরুতেই শ্রমিকেরা এই ইনক্রিমেন্ট পাবেন বলে জানা গেছে। শ্রমিকদের উচিত হবে কারখানাগুলো উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। শ্রমিকদের অন্য যে দাবিগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়েও কমিটি কাজ করছে। যদি কোনো শ্রমিক উসকানির ফাঁদে পা দেন, তাহলে সেই দায়িত্ব তাঁর নিজেরই নিতে হবে।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, নাসা গ্রুপের তিনটি কারখানা ১৩(১) ধারা অনুসারে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫-৩০টি কারখানা দুপুরের আগে বিভিন্ন সময়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। শ্রমিকেরা মূলত বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট নন, তাই তাঁরা কাজ বন্ধ করে বসে ছিলেন। গার্মেন্টস ছুটি দেওয়ার পর শ্রমিকেরা স্টারলিং ক্রিয়েশন লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়েছিলেন। এর বাইরে কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।